আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের
দূষণের শিকার হচ্ছি। সেসব দূষণের কারণে আক্রান্ত হচ্ছি রোগব্যাধিতে। বেশি
আলোচিত দূষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূূষণ ইত্যাদি।
কিন্তু কম আলোচিত এমন কিছু দূষণ রয়েছে যেগুলোর ক্ষতি করার ক্ষমতা কম নয়।
এমনই
একটি দূষণ হলো সিসাদূষণ। মঙ্গলবার চিকিৎসাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সাময়িকী
দ্য ল্যানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে
এসেছে, সিসাদূষণের কারণে বাংলাদেশে ২৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের মধ্যে
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে। দেশে প্রতি লাখে ৮৫ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে
সিসাদূষণের কারণে সৃষ্ট হৃদরোগে। অর্থাৎ বছরে মারা যাচ্ছে এক লাখ ৩৮ হাজার
৫৪ জন, যা আগের অনুমানের চেয়ে সাড়ে চার গুণ বেশি।
একই সঙ্গে কমছে
শিশুদের বুদ্ধিমত্তা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। এর ফলে
আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ২৮ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের জিডিপির ৯
শতাংশ। ‘গ্লোবাল হেলথ বার্ডেন অ্যান্ড কস্ট অব লেড এক্সপোজার ইন চিলড্রেন
অ্যান্ড অ্যাডাল্টস : এ হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ইকোনমিক মডেলিং
অ্যানালিসিস’ শিরোনামে গবেষণাটি করেছেন বিশ্বব্যাংকের একদল গবেষক।
দরিদ্র
ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সিসাদূষণের হার ক্রমেই বাড়ছে। আর এর প্রধান শিকার
হচ্ছে শিশুরা। বিশ্বে প্রায় ৮০ কোটি শিশু সিসাদূষণের শিকার, যার মধ্যে শুধু
বাংলাদেশেই রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশু। মাঝারি থেকে উচ্চ দূষণের
কারণে স্নায়বিক সমস্যা ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া মাথা ব্যথা, পেট
ব্যথা, স্মৃতি কমে যাওয়া, দুর্বল মনোযোগ, ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ
নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
সিসা অত্যন্ত ভারী ধাতু। রক্তে
সিসার মাত্রা বেড়ে গেলে তা মস্তিষ্কের নিউরনের ক্ষতি করে এবং শিরায় রক্ত
চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। বিশ্বে সিসাদূষণের কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত
দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এই অবস্থায় সিসাদূষণ কমাতে
অবিলম্বে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সিসাদূষণের একটি বড় উৎস মনে
করা হয় লিড-এসিড ব্যাটারির রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াকে। যত্রতত্র, এমনকি
ঘনবসতির লোকালয়েও এ ধরনের রিসাইক্লিং কারখানা দেখা যায়। কয়েক দিন আগে কালের
কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, ঢাকার ধামরাইয়ে সূতিপাড়া ইউনিয়নের বেলীশ্বর
গ্রামে একটি সিসা ও ব্যাটারি তৈরির কারখানা রয়েছে। রাত-দিন চলা এই কারখানা
থেকে সিসার ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে। আশপাশের মাটিও দূষিত হচ্ছে। স্থানীয়রা
কারখানাটি বন্ধের দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন করেছে, বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত
অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু কারখানাটি বন্ধ হচ্ছে না। সারা দেশেই এ ধরনের বহু
কারখানা ছড়িয়ে রয়েছে। ধাতব, সিরামিক পাত্রসহ আরো অনেকভাবে সিসাদূষণ হচ্ছে।
আমরা
মনে করি, সিসাদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাটারি
রিসাইক্লিং কারখানার মতো ক্ষতিকর উৎসগুলো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।