রাসুল সা. বলেছেন, অজু ভেঙ্গে যাওয়ার পর অজু করার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদের কারো নামাজ কবুল করেন না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই:
১.
পবিত্রতা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। অজু না থাকা অবস্থায় নামজ শুদ্ধ
হয় না। ভুলে অজু না থাকা অবস্থায় নামাজ শুরু করলে মনে পড়ার সাথে সাথে নামাজ
ভেঙে অজু করে নেওয়া ওয়াজিব, নামাজ অব্যাহত রাখা জায়েজ নেই। নামাজের মধ্যে
কারো অজু ভেঙে গেলে নামাজ ভেঙে অজু করে আসতে হবে। ইমাম নববি (রহ.) বলেন,
আলেমদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই যে, অজু বা তায়াম্মুম করা ছাড়া
ফরজ ও নফল যে কোনো নামাজ আদায় করা হারাম।
২. কেউ অজু ছাড়া নামাজ পড়ে
ফেললে তার ওপর অজু করে নামাজটি আবার আদায় করা ওয়াজিব। ওই নামাজের মাধ্যমে
ফরজ আদায় হবে না। মনে পড়ার সাথে সাথে ওই নামাজটি আবার পড়তে হবে। ওই দিন,
কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরও যদি মনে পড়ে যে, অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের
নামাজ পড়ার সময় সে অজু অবস্থায় ছিল না, তাহলে সাথে সাথে আবার ওই নামাজ পড়ে
নিতে হবে।
৩. কেউ যদি এমন অবস্থায় থাকে যে সে অজু বা তায়াম্মুম
কোনোভাবেই পবিত্রতা অর্জন করতে পারছে না, সে পবিত্রতা ছাড়াই নামাজ আদায় করে
নেবে। যেমন কেউ যদি অত্যন্ত অসুস্থ হয় অথবা এমন কোনো জায়গায় বন্দি থাকে
যেখানে পানি বা মাটি কিছুই নেই, তার নামাজ পবিত্রতা ছাড়াই শুদ্ধ হবে। ওই
নামাজ আবার পড়া ওয়াজিব নয়। আল্লাহ বলেছেন,
আল্লাহকে ভয় করো তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী। (সুরা তাগাবুন: ১৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদেরকে আমি যে নির্দেশ দেই, তা পালন করো সাধ্য অনুযায়ী। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
স্ত্রী অসুস্থ হলে স্বামীর করণীয়
স্বামী-স্ত্রী
একে অপরের পোশাকের মতো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তারা
তোমাদের পোষাকস্বরুপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরুপ।’ (সূরা বাকারা, আয়াত,
১৮৭)
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সব থেকে নিবিড়
আয়াতে ‘পোষাক’ শব্দ
ব্যবহার করে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে
একেবারে নিবিড় ও দৃঢ়, যা ঠুনকো কোনো কারণে ছিন্ন হয় না। যেমন পোশাক মানুষের
প্রিয় বস্তু এবং শালীন ও অভিজাত শ্রেণীর মানুষজন কখনোই পোশাক থেকে
বিচ্ছিন্ন হতে চান না।
মুফাসসিরদের মতে, আয়াতে স্বামী-স্ত্রীকে একে
অপরের পোশাক বলার মাধ্যমে আরেকটি বিষয় বোঝানো হয়েছে যে, তারা পরস্পরের
সম্মান রক্ষাকারী, আশ্রয়স্থল এবং পরস্পরের হৃদয়ের প্রশান্তি লাভের মাধ্যম।
পোশাক পরার পর মানুষ যেভাবে স্বস্তি লাভ করে, ঠিক তেমনি স্বামী-স্ত্রী একে
অপরের মাধ্যমে আত্মিক ও দৈহিক প্রশান্তি লাভ করেন।
সুখী সংসার গঠনে
সুখী
সংসার গঠনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বিশেষ করণীয় আছে। কিন্তু পরিবারের
দায়িত্বশীল হিসেবে এ ক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব বেশি। দাম্পত্য জীবন সুখকর,
সুশৃঙ্খল করতে এবং স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম
জীবনসঙ্গী স্বামীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব অর্পণ করেছে। আল্লাহ বলেন,
‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হল ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের
ব্যবস্থা করা।’ (বাকারা, আয়াত, ২৩৩)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও
পোশাক-পরিচ্ছদের অধিকার রয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস, ১২১৮; মিশকাত, হাদিস,
২৫৫৫)।
অন্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে সব থেকে ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো
ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, ১১৬২)
অসুস্থ স্ত্রীর পাশে...
স্বাভাবিক
নিয়মে স্বামী অসুস্থ হলে স্ত্রীরা মনপ্রাণ দিয়ে স্বামীর সেবা করে থাকেন।
এর বিপরীতে স্বামীদের পক্ষ থেকে স্ত্রীদের এমন সেবা করতে দেখা যায় না খুব
একটা। তবে ইসলাম দুজনের প্রতি দুজনের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে গুরুত্ব
দিয়েছে। স্ত্রী অসুস্থ হলে তার সেবা করা ইসলামের শিক্ষা।
সাধ্যমতো
অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করা স্বামীর কর্তব্য। ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু বলেন, ওসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন।
কারণ, তার স্ত্রী আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা
অসুস্থ ছিলেন। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, বদর
যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও (গনিমতের) অংশ তুমি পাবে। (বুখারি,
হাদিস, ৩১৩০)