সরকারের
বেঁধে দেওয়া দামে বাঁধা যায়নি ব্যবসায়ীদের। খুচরা পর্যায়ে আলু বিক্রি
হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায়। ডিম কিছু কিছু দোকানে
বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে, প্রতি ডজন ১৪৪ টাকায়। আবার বেশ কিছু
দোকানে বিক্রি করছে ১৫০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করা নিয়ে
বিক্রেতাদের রয়েছে নানান অজুহাত।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় বাজারের এই পরিস্থিতি।
আজ
বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০
টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ২৬০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৮০-৩০০
টাকা, চায়না রসুন ২০০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি
হচ্ছে।
গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আজ দেশি আদা ৪০ টাকা,
ইন্দোনেশিয়ান আদা ২০-৪০ টাকা ও দেশি রসুন ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা পর্যায়ে আলু-পেঁয়াজ বিক্রিতে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত দাম।
নির্ধারিত
দামে বিক্রি না করা নিয়ে আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা রাসেল বলেন, আমি গতকাল রাতে
আলু কিনেছি। আমি তো কম দামে কিনতে পারিনি, বিক্রি করবো কীভাবে। আমার কেনা
পড়েছে ৪২ টাকা, তারপর ভাড়া, নষ্ট আলু বাদ দিয়ে ৫০ টাকাতেই বিক্রি করতে হয়।
আরেক বিক্রেতা হালিম বলেন, পাইকাররা দাম না কমালে আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করবো?
বাজার করতে আসা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার তো দাম নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু আমাদের কিনতে হয় বেশি দামেই।
উল্লেখ্য,
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তিন কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত
জানান। সে অনুযায়ী প্রতিকেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬৪ থেকে
৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬-২৭
টাকা। ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে ডিম আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া
বোতল ও প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা লিটার, খোলা তেল ১৪৯ টাকা, পাম ওয়েল
১২৪ টাকা, চিনি খোলা ১২০ ও প্যাকেট ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসব
পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা ডজনে।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ডিমের দাম পড়ে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। তবে কিছু কিছু দোকানে
সরকার নির্ধারিত দামেই ডিম বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর সয়াবিন বিক্রি আগের
দামেই, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৫১
টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
ডিম বিক্রেতা আব্দুল জব্বার প্রতি ডজন ডিম ১৫০
টাকায় বিক্রি করছিলেন। কেন বেশি দামে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,
অনেক ডিম ভাঙা থাকে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
আরেক ডিম বিক্রেতা
সালাম নির্ধারিত দামেই ডিম বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, সরকার যেহেতু দাম
নির্ধারণ করেই দিয়েছে, তাহলে এর বেশি বিক্রি করার উপায় নাই।
মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের সোহান বলেন, আমার নতুন তেল উঠানো হয়নি, তাই আগের দামেই বিক্রি করছি।
নির্ধারিত
দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা
অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। মূল্য তালিকা না থাকায় ও বেশি দামে বিক্রি করায়
পেঁয়াজের দুই পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা এবং একজন ডিম ব্যবসায়ীকে ২
হাজার টাকা জরিমানা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী
পরিচালক আব্দুল জব্বার।
অভিযান শেষে আব্দুল জব্বার বলেন,
বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের মহাপরিচালকের
সার্বিক তত্ত্বাবধানে সারা দেশে ডিম, সয়াবিন তেল, আলু, পেঁয়াজের যে দাম
নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, তা তদারকি করার জন্যই মূলত আজকের এই অভিযান।
তিনি
বলেন, যেহেতু গতকালই এই মূল্য তালিকা নির্ধারণ করে হয়েছে তাই ব্যবসায়ী মহল
এখনও এই ব্যাপারে সিনসিয়ার না, তারা আগের মূল্য তালিকাই রেখে দিয়েছে।
তিনটি প্রতিষ্ঠানে আমরা অনিয়ম পেয়েছি। ডিমের একটি প্রতিষ্ঠানে আমরা
অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অনিয়ম পেয়ে তাকে আইনের আওতায় এনেছি। আর অন্য
প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছে।
এই কর্মকর্তা জানান,
পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তা দুটি প্রতিষ্ঠানে
দেখিনি। ফলে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের
উপস্থিতিতে মূল্য তালিকা ঠিক করেছে। আমরা আশা করছি, আজ যেহেতু প্রথম দিন
তাই একটু সময় লাগছে। বিকাল থেকে বা আগামীকাল থেকে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।