বোলিংয়ে
সিরাজ-পান্ডিয়া-বুমরাহর দাপটে ৫০ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
ফলে ভারতের এশিয়া কাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। ৫১ রানের
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লঙ্কান বোলারদের পিটিয়ে মাত্র ৬.১ ওভারেই জয়ের
বন্দরে পৌঁছায় ভারত। ফলে কোনো উইকেট না হারিয়েই দ্রুততম সময়ে এশিয়া কাপ
জয়ের রেকর্ড গড়েছে রোহিত শর্মার ভারত।
এদিন দুই ওপেনার ইশান কিষান ২৩ রানে ও শুভমান গিল ২৭ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এই
ম্যাচ জয়ের পথে একের পর এক রেকর্ড গড়েছে ভারত। ১৫.২ ওভারে এশিয়ার কাপের
ফাইনালের প্রথম ইনিংসটিই সবচেয়ে কম ওভারের ইনিংস। এর আগে ২০০২ সালে শারজায়
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬.৫ ওভারের ইনিংসটিও ছিল শ্রীলঙ্কার।
শুধু এশিয়া
কাপ নয়, একদিনের ক্রিকেটের যেকোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে এটি সর্বনি¤œ
প্রথম ইনিংস। এর আগে ২০০০ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই শারজায় অজন্তা
মেন্ডিসের ঘুর্ণিতে ৫৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারতের ইনিংস।
ভারতের
বিপক্ষে এটিই যেকোনো দলের সবচেয়ে কম রানের প্রথম ইনিংস। এর আগে ২০১৪ সালে
মিরপুরে সর্বনি¤œ ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। তার আগের ৭৫ রানের প্রথম
ইনিংসটি জিম্বাবুয়ের। ২০০৫ সালে হারারেতে ভারতের বিপক্ষে লজ্জার ওই রেকর্ড
গড়ে তারা।
তবে শ্রীলঙ্কা এর আগেও এমন সর্বনি¤œ রানের ইনিংস খেলেছে বেশ
কয়েকবার। তাদের সবচেয়ে কম রানের ইনিংসটি মাত্র ৪৩ রানের। ২০১২ সালে দক্ষিণ
আফ্রিকার বিপক্ষে ওই লজ্জার বেকর্ড গড়ে তারা। আজকের ইনিংসটি তাদের দ্বিতীয়
সর্বনি¤œ রানের ইনিংস। তাছাড়া ১৯৮৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৫ এবং
২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে তারা।
এশিয়া কাপের
ইতিহাস মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে দশ উইকেটের সবগুলো নিয়েছে ভারতের পেসাররা।
এর আগে এই সিরিজেই গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ভারতের দশ উইকেট নেয়
পাকিস্তানের পেসাররা। ওই ম্যাচটির দ্বিতীয় ইনিংস অবশ্য বৃষ্টিতে ভেসে যায়।
এ
ম্যাচে সিরাজের অর্জনও কম নয়। এশিয়া কাপে ওয়াকার ইউনুসের ২৬ রানে ৬
উইকেটের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। ১৯৯০ সালে ওই রেকর্ড গড়েন ইউনুস। তবে
ভারতের বোলারদের মধ্যে চতুর্থ বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ বোলিং ফিগার গড়েছেন
তিনি। ভারতের ২০১৪ সালে মিরপুরে সেই ম্যাচে ৪ রানে ৬ উইকেট নেন স্টুয়ার্ট
বিনি। এ ছাড়া ১৯৯৩ সালে ১২ রানে অনিল কুম্বলের ৬ উইকেট এবং ২০২২ সালে
বুমরাহর ২২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তার উপরে রয়েছেন।
এদিন টস জিতে আগে
শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান রোহিত শর্মা। প্রথম ওভারেই দলকে উইকেট এনে দেন
জসপ্রিত বুমরাহ। বাকি কাজটা সারেন মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি একাই ছয় উইকেট
নিলে মাত্র ৫০ রানেই গুটিয়ে গেছে লঙ্কানদের ইনিংস।
সিরাজের ৬ উইকেটের
পাশাপাশি শেষের ৩ উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া। ফলে ১৫.২তম ওভারেই অলআউট হয়ে
যায় কুশল মেন্ডিসের দল। অধিনায়ক কুশল দলকে টেনে নেয়ার শেষ চেষ্টা করলেও
বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি।
দ্বিতীয় ওভারে, অর্থ্যাৎ নিজের প্রথম ওভারটি মেইডেন নিলেও পরের ওভারগুলোতে যে এমন তা-ব করবেন সিরাজ, তা বোধহয় তিনি নিজেও জানতেন না।
ব্যক্তিগত
দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে চার উইকেট নেন তিনি। ব্যক্তিগত দ্বিতীয়
ওভারে তিন স্লিপ নিয়ে বোলিং শুরু করেন সিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের প্রথম
ডেলিভারিটি ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ক্যাচ দেন
পাথুম নিশাঙ্কা। পরের বল ডট। তৃতীয় বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন
সাদিরা সামারাবিক্রমা। চতুর্থ বলে সিরাজের ফুলার লেন্থের ডেলিভারি পুশ করেন
চারিথা আসালাঙ্কা। তবে ব্যাটে-বলে না হওয়ায় তা সোজা চলে চায় কাভারে ইশান
কিশানের হাতে। পঞ্চম ডেলিভারতে হ্যাট্রিক পাননি তিনি। তবে ওভারের শেষ বলে
ফুলার লেংথের ডেলিভারিতে ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে উড়িয়ে মারতে আউটসাইড
এজ হয়ে যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। উইকেটের পেছনে থাকা লোকেশ রাহুল সেটি
গ্লাভসবন্দি করলে। চতুর্থ ওভার শেষে ১২ রানে পাঁচ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।
পরের
ওভারটি মেইডেন নেন বুমরাহ। ফিরতি ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ এক আউট সুইংয়ে
দাসুন শানাকাকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান সিরাজ।
এরপর দুনিথ
ওয়েল্লালাগেকে নিয়ে ক্রিজে থিতু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কুশাল মেন্ডিস। তবে
তাকেও বোল্ড করে শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধের শেষ সম্বলটুকুও ভেঙে দেন সিরাজ।
পরে
ওয়েল্লালাগেকে ফেরান হার্দিক। এরপর ১৫তম ওভারের প্রথম দুই বলে প্রমোদ
মাদুশান ও মাথিসা পাথিরানাকে পরপর দুই বলে আউট করে ৫০ রানে শ্রীলঙ্কার
ইনিংসের সমাধি করেন হার্দিক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০(১৫.২) অলআউট; কুশল মেন্ডিস ১৭(৩৪), দুসান হেমন্ত ১৩(১৫); সিরাজ ৬/২১, হার্দিক ৩/৩।
ভারত: ৫১ (৬.১) কোনো উইকেট না হারিয়ে; শুভমান গিল ২৭(১৯), ইশান কিষান ২৩(১৮)।
ফলাফল: ভারত ১০ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ সিরাজ।