আদালত
অবমাননার দায়ে হাইকোর্টে এক মাসের সাজাপ্রাপ্ত কুমিল্লার সাবেক চিফ
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত) মো. সোহেল
রানা আপিল বিভাগে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ক্ষমার আবেদনে তিনি
বলেছেন, আমাকে ক্ষমা করে সাজা থেকে অব্যাহতি দিয়ে একজন ভালো বিচারক হওয়ার
সুযোগ দিন।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের
নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে
সোহেল রানার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পরবর্তী শুনানির জন্য বুধবার (৬
নভেম্বর) দিন ধার্য করেন আদালত।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি
জানান, সোহেল রানার পক্ষে এখন পর্যন্ত নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পৃথক
চারটি আবেদন করা হয়েছে। এসব আবেদনের বিষয়ে শুনানি চলছে। এ বিষয়ে আরও
শুনানির জন্য বুধবার পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আদালত।
আদালতে এদিন
বিচারকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন
অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ।
গত ১২
অক্টোবর মো. সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ-াদেশ দেন হাইকোর্ট। রায়ে
তাকে সাতদিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে
আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওইদিন আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি
করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন
আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায়।
এর আগে গত ২১ নভেম্বর আপিল বেঞ্চ সোহেল
রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা
জরিমানার রায় ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন।
গত ১২ অক্টোবর
সন্ধ্যায় কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানার
সাজার রায় ২০ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে
শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন। ওইদিন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর
রহিম তার খাস কামরায় এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,
হাইকোর্টের সাজার আদেশের পর জামিন আবেদনের পাশাপাশি চেম্বার আদালতের কাছেও
একটি আবেদন নিয়ে যান বিচারক সোহেলের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। তখন চেম্বার
আদালত তার খাস কামরায় বসেই সাজা স্থগিত করে আদেশ দেন।
একই দিন বেলা সাড়ে
১১টার দিকে আদালত অবমাননার দায়ে বিচারক মো. সোহেল রানাকে এক মাসের
বিনাশ্রম কারাদ- দেন বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ
হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কিন্তু তিন ঘণ্টা পর দুপুরে হাইকোর্টের একই
বেঞ্চ তাকে জামিন দেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আদালত প্রাঙ্গণে কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি হলেও আইনের দিক থেকে এখানে কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে জানান আইনজীবীরা।
মামলার
নথি থেকে জানা যায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া
আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল
থানায় একটি মামলা হয়। মামলার কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির
করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। একই
সঙ্গে মামলার কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
২০১৯
সালের ৬ মার্চ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন
হাইকোর্ট। এ স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল
ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
উচ্চ
আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে মামলার কার্যক্রম চালানো এবং অভিযোগ গঠন করায়
বিচারক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে অভিযোগ করেন আসামি মামুন চৌধুরী।
গত
১৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে বিচারক সোহেল রানাকে তলব করেন। উচ্চ আদালতের
আদেশ অমান্য করার বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ২১ আগস্ট তাকে হাইকোর্টে
হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাইকোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে
জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২৮ আগস্ট সোহেল রানার
প্রতি আদালত অবমাননার স্বপ্রণোদিত রুল দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর
তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত অবমাননার রুলের পর গত
৩১ আগস্ট বিচারক সোহেল রানা কুমিল্লার সেই মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশ
প্রত্যাহার করেন। হাইকোর্টের ধার্য তারিখে হাজির না হয়ে তিনি সময়ের আবেদন
করেন। হাইকোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ঠিক করেন।
সে অনুযায়ী সোহেল
রানা ধার্য তারিখে হাইকোর্টে হাজির হন এবং আদালত অবমাননার বিষয়ে নিঃশর্ত
ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালত ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ না করে তাকে
বিনাশ্রম একমাসের কারাদ- এবং জরিমানার আদেশ দেন।