শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪
৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:৪২ এএম |

 আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না

বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করতে চায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের ভোটাধিকার অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে- এত সাহস তাদের নেই। তারা পারবে না।
ভোট চুরি করতে পারবে না বলেই বিএনপি ভোট বর্জন করছে দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন আজ তারা বর্জন করছে। বর্জন করাটা খুবই স্বাভাবিক। ভোট চুরি করতে পারবে না। এজন্য নির্বাচন করবে না। কারণ এর আগে তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের (বিএনপির) সৃষ্টি। ক্ষমতা চুরি, ক্ষমতা দখল, ভোট চুরি। এছাড়া আর কিছু পারে না। সেজন্য ইলেকশন করতে চায় না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়।
সোমবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ক্ষমতায় আসতে আওয়ামী লীগের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। আপনারা প্রত্যেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে তার জবাব দেবেন। আপনার ভোট আপনি দেবেন। ভোট রক্ষা করবেন। কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। আপনারা ভোট দেবেন। অগ্নিসন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন। অগ্নিসন্ত্রাসের জবাবে দেবেন।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, তারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়। বাস, গাড়ি, রেল পুড়িয়ে দেয়। ফিসপ্লেট ফেলে দিয়ে রেলে দুর্ঘটনা ঘটায় যাতে মানুষ মারা যায়। তারা লাশ চায়। অগ্নিসন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের কারণে বাবার সামনে সন্তান পুড়ে মারা গেছে। স্বামীর সামনে স্ত্রী পুড়ে মারা গেছে। এদের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। ওরা এদেশের সর্বনাশ করতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর পর অস্ত্র হাতে নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য গড়েনি। ৭৫ এর আগে মানুষ সেখানে ছিল তার থেকে আরও খারাপ অবস্থা তাদের হয়েছিল। তখন দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। সেই সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিচয় দিতেও ভয় পেত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আর্দশকে জলাঞ্জলি দেয়। উন্নয়নের গতি থেকে যায়। ২৭৭ ডলার মাথাপিছু আয় রেখে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, পরে প্রতি বছরেই তা মাইনাস হতে থাকে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ে।
তিনি বলেন, মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে তৈরি হওয়া দল বিএনপি। স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারী, যাদের রাজনীতি জাতির পিতা নিষিদ্ধ করেছিলেন, জিয়াউর রহমান ওই জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষা করে তাদের পুরষ্কৃত করে। তখন আইনের শাসন পদদলিত করে বিচারহীনতার কালচার শুরু হয়।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরেই আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। এর মাঝেই ফিরে পাবো হারানো বাবা-মা-ও ভাইয়ের স্নেহ এবং আমি তা পেয়েছি। আমার ক্ষমতার একমাত্র উৎস হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ। তাদের জন্য আমি আমার বাবার মতো জীবন উৎসর্গ করে পথে নেমেছি। গোলা-বারুদ, বোমা, গ্রেনেড হামলা কোনও কিছুই আমাকে বাধা দিতে পারেনি। আমার প্রত্যয় এদেশের মানুষের মুখে অন্ন জোগাবো। সবার চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবো। উন্নত জীবন দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা ২৩৩টি আসন পেয়েছিলাম। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। জনগণ তাদের দুর্নীতি, চুরি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাই সৃষ্টির জন্য প্রত্যাখ্যান করেছিল। ২০১৩-১৪ সালে তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। এখনও বহু মানুষ সেই অগ্নিসন্ত্রাসের ক্ষত বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
তিনি যোগ করেন, ২০১৮ সালে আমি সংলাপ করেছিলাম। তারা নির্বাচনে এসেছিল। কিন্তু তাদের নির্বাচন হয়ে গেল নমিনেশন বাণিজ্য। লন্ডনে বসে তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন। গুলশান অফিস থেকে ফখরুল ইসলাম দেয় নমিনেশন। আর পুরানা পল্টন অফিস থেকে রিজভী দেয় নমিনেশন। সকালে বলে এ আমাদের প্রার্থী, কিছুক্ষণ পরে এ নয় অন্যজন প্রার্থী। তারেক জিয়ার তো কথাই ছিল কত টাকা দেবেন-নমিনেশন নেবেন। যে টাকা দেবে না নমিনেশন বাদ। ওইভাবে নমিনেশন বিক্রির ফলে তাদের নির্বাচন ভেস্তে যায়। সব দোষ দেয় আমাদের ওপর। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তির ওপর বিশ্বাস করে। জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে। জনগণের ভোট জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ক্ষমতায় আছি। ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যহত থাকার কারণে অগ্নিসন্ত্রাসের সময় বাদে অন্যসময়ে মানুষ শান্তিতে থাকার কারণে আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা কাজ করে মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই। আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারাই ভোট চুরি করে। ভোটচুরি ছাড়া তারা জিততে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনেই সেটা প্রমাণিত সত্য।
আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের কল্যাণে সবকিছু করেছে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ উন্নয়ন হয়েছে। আমরা সবার জন্যই কাজ করি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আজ তো দারিদ্রের হাহাকার শোনা যায় না। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কর্মসংস্থার আমরা বৃদ্ধি করেছি। আজ বেকারত্ব মাত্র তিন ভাগ। ইনশায়াল্লাহ সেটাও থাকবে না। আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে আরও সুন্দর করবো। দেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত করবো।
ঢাকা শহরের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের পানি সমস্যা দূর করেছি। বিদ্যুতের সমস্যা দূর করেছি। সারা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ঢাকার যানজট দূর করতে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। ঢাকার কোথাও যাতে যানযট না থাকে সেজন্য আমরা মোট ৬টি মেট্রোরেল করে দেবো। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমরা করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ঢাকা ঘিরে থাকা নদীগুলোকে পুনখনন করে দুষণমুক্ত ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম চিন্তা করে হাসপাতাল করে দিয়েছি। ঢাকা মেডিক্যালে চার হাজার মানুষের চিকিৎসা পায় সেজন্য নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার ডিজাইন করা হয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে নির্মাণ কাজ শুরু করবো। ঢাকা ঘিরে ওয়াটার ওয়ে করার ব্যবস্থা করা হবে। আমরা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ঢাকা শহরের সব তার পর্যায়ক্রমে মাটির নিচ দিয়ে নিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, বঙ্গবাজারে যতগুলো মার্কেট আছে বহুতল ভবন করে আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেবো। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। বস্তিবাসীদের ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হবে। জেলা পর্যায় পর্যন্ত হরিজন-দলিত শ্রেণিদের ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সব ধরনের কল্যাণ করার, মানুষের যা যা প্রয়োজন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা হয়। এটা প্রমাণিত সত্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। এর আগে জিয়াউর রহমান ছিল, এরশাদ ছিল, খালেদা জিয়া ছিল। বাংলাদেশের জনগণকে কিছু দেয়নি। নিজেরা নিয়েছে। নিজেরা অর্থশালী সম্পদশালী হয়েছে। ভাঙা স্যুটকেট ও ছেড়া গেঞ্জি থেকে জাদু পেয়ে সম্পদের মালিক হয়েছে। দেশের মানুষকে দেয়নি তারা। দেবে না তারা। আসে লুটপাট করে খেতে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের সেটাই তো চরিত্র।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন। নানা কথা বলেন। মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। তাদের কাজই হচ্ছে বিভ্রান্ত করা। গণতন্ত্র থাকলে তাদের নাকি মূল্য থাকে না। আর যদি কোনও অস্বাভাবিক সরকার হয় উনাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কত মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে তাদের দেখতে হবে। কার কত মূল্য সেটা আমরা দেখতে চাই। ক্ষমতায় থাকতে কই দেশের মানুষের তো ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ঢাকার ১৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ১৫টি রতœ আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। তারা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে। ঢাকার মানুষের সেবা করবে।
নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নুহু নবীর নৌকা মহাপ্লাবনে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকাই মানুষের প্রাণ বাঁচায়। নৌকাই উন্নতি দেয়। নৌকা নিশ্চিত জীবন দেয়। শান্তি দেয়-সমৃদ্ধি দেয়। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে আজ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ-ডিজিটাল বাংলাদেশ। নৌকায় ভোট দেবেন। আমরা ১৯৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। প্রথম যারা ভোটার তাদের আহ্বান জানাবো নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।













সর্বশেষ সংবাদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা কমিটি ঘোষণা
র‌্যাব হাতে অস্ত্রধারী আল আমিন ও তার সহযোগী গ্রেফতার
চাঁদাবাজদের ধরে খুঁটির সাথে বেঁধে পুলিশে দিন :হাসনাত আবদুল্লাহ
কুমিল্লা অঞ্চলের সেরা ৫ জন ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ নির্বাচিত
কুমিল্লায় অলিতে-গলিতে ডাবের খোসা; বাড়ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা কমিটি ঘোষণা
নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন
কুমিল্লায় চার জনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক
কুমিল্লায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন
কুবির দুই হলের নাম পরিবর্তন ও এক হলের নতুন নামকরণ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২