ঘুষের অর্ধলাখ টাকাসহ আটক হওয়ার পর বরখাস্ত বগুড়া কর অঞ্চলের সহকারী কর কমিশনার অভিজিৎ কুমার দে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।
মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম শুক্রবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে গেজেট হয়েছে।’
বগুড়া দুদক কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক (বর্তমানে রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক) আমিনুল ইসলাম ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, চাকরিচ্যুত অভিজিৎ কুমার দে যশোরের মনিরামপুরের সনৎ কুমার দের ছেলে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঘুষের অর্ধলাখ টাকাসহ আটকের সময় তিনি বগুড়া কর সার্কেল-১৪ এবং কর সার্কেল-১৫-এর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কর কমিশনার ছিলেন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ব্যবসায়ী ইউনুস আলী গত ২০ বছর নিয়মিত কর পরিশোধ করেছেন। কিন্তু সে টাকা কর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তিনি ওই টাকা কর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কর কমিনার অভিজিৎ কুমার দে এ জন্য তার কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে তিনি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে কাজটি করে দিতে রাজি হন। ব্যবসায়ী ইউনুস মোবাইল ফোনে ঘুষ দাবির কথা রেকর্ড করেন এবং বিষয়টি দুদক বগুড়া কার্যালয়ে অবহিত করেন।
দুদক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর ফাঁদ পাতার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ৫০ হাজার টাকা বিশেষভাবে চিহ্নিত করে ইউনুস আলীর মাধ্যমে পাঠানো হয়। তিনি বগুড়া শহরের নিশিন্দারা এলাকায় হাউজিং এস্টেটের ২০নং সড়কে কর কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। অভিজিৎ ঘুষের টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রাখেন। এ সময় অফিসে ঢুকে কর কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
এ ঘটনায় দুদক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দ-বিধির ১৬১ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫-এর ২ ধারায় মামলা করেন। পরদিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতারের পর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিজ্ঞাগের এক প্রজ্ঞাপনে অভিজিৎ কুমার দে’কে গ্রেফতারের দিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণের দায়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তা আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবাব দিলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। পরবর্তী সময়ে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে কেন চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন আসামি। পরে তাকে চাকরি থেকে অপসারণে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত চাওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠান শাস্তির বিষয়ে একমত পোষণ করে।