ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাখাপাতœাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ডাবল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ইয়াশাসবি জয়সওয়াল।
আন্তর্জাতিক
ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি। স্নায়ুর চাপ তো কিছু থাকার কথা।
কিন্তু কিসের কী! ইয়াশাসবি জয়সওয়াল যেন তা উড়িয়ে দিলেন তুড়ি মেরে। ১৮৫
থেকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় ওড়ালেন শোয়েব বাশিরকে। এই অফ স্পিনারের পরের
ওভারের প্রথম দুই বলেই ছক্কা ও চার মেরে পৌঁছে গেলেন তিনি ডাবল
সেঞ্চুরিতে!
দুইশ ছুঁয়ে জয়সওয়াল জায়গা পেয়ে গেলেন রেকর্ড বইয়েও। ভারতের টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি।
ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে বিশাখাপাতœাম টেস্টের প্রথম দিনেই রাজত্ব করেছিলেন জয়সওয়াল।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে প্রথম দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ১৭৯ রানে। দ্বিতীয় দিন
সকালে শনিবার তিনি দারুণ গতিতেই পৌঁছে যান দ্বিশতকে।
সেই চেনা উদযাপনও
মেলে ধরেন আরেকবার। দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা। এক হাতে ব্যাট
আর আরেক হাতে হেলমেট বাড়িয়ে দুহাত মেলে ধরা। এরপর ব্যাট-হেলমেট ফেলে দুহাত
প্রসারিত করে মুহূর্তটি যাপন করা।
গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে ১৭১ রানের
ইনিংস খেলে তার টেস্ট অভিষেক। ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি
টি-টোয়েন্টিতে। সেঞ্চুরি করেছেন আইপিএলেও। এবার ষষ্ঠ টেস্টেই পেলেন
ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ। বড় মাইলফলক বলেই হয়তো এবার তার
উদযাপনও হলো একটু দীর্ঘ।
২২ বছর ৩৬ দিন বয়সে এই টেস্ট শুরু করেছেন জয়সওয়াল। ভারতের হয়ে তার চেয়ে কম বয়সে দুইশ রানের ছোঁয়া পেয়েছেন আর কেবল দুজন।
১৯৯৩
সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে ২১ বছর ৩২ দিন বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি
করেছিলেন বিনোদ কাম্বলি। সেটি ছিল তার তৃতীয় টেস্ট। ক্যারিয়ারের শুরুতে
দারুণ সাড়া জাগানো প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান পরের টেস্টেও ডাবল সেঞ্চুরি
করেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। পরে অবশ্য স্রেফ ১৭ টেস্ট খেলে ৫৪.২০ গড়
নিয়ে শেষ হয় তার ক্যারিয়ার।
২২ বছর বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি: কাম্বলি-গাভাস্কারের পরই জয়সওয়াল
কিংবদন্তি সুনিল গাভাস্কার ক্যারিয়ারের প্রথম সিরিজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ২১ বছর ২৭৭ দিন বয়সে।
সবচেয়ে
কম বয়সে ডাবল সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ডটির বয়স অবশ্য ৫০ হতে চলল। ক্যারিয়ারের
তৃতীয় টেস্টেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন উপমহাদেশের আরেক কিংবদন্তি জাভেদ
মিয়াঁদাদ। ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে কীর্তিটি গড়েছিলেন
তিনি ১৯ বছর ১৪০ দিন বয়সে।
সেই মহারথীদের কীর্তিই এবার মনে করিয়ে দিলেন
তরুণ জয়সওয়াল। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই যাকে ভবিষ্যৎ মহাতারকা হিসেবে বলে
আসছেন ভারতীয় ক্রিকেটের অনেকেই। মুম্বাইয়ের দরিদ্র এক পরিবার থেকে উঠে এসে
ক্রিকেট শেখার জন্য আজাদ ময়দানের পাশে তাঁবুতে থেকে, প্রতিনিয়ত অনেক লড়াই
করে, শহরের নানা ময়দান মাতিয়ে একসময় ভারতীয় ক্রিকেটের মূল স্রোতে উঠে আসেন
তিনি। সেই পথ ধরেই এখন আন্তর্জাতিক আঙিনায় ছড়িয়ে পড়ছে তার প্রতিভার রোশনাই।
ভারতের হয়ে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরুটা তার হয়েছে দারুণ।
বিশাখাপাতœামে
এই টেস্টে দেখিয়ে দিয়েছেন, অভিজ্ঞতা কম থাকলেও তার পরিপক্বতা কতটা।
অসাধারণ ব্যাট করে ভারতের ইনিংসকে বলতে গেলে একাই টেনেছেন তিনি। দ্বিতীয়
দিন প্রথম সেশনে ভারত প্রথম ইনিংসে অল আউট হয়েছে ৩৯৬ রানে। জয়সওয়াল একাই
করেছেন ২৯০ বলে ২০৯। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রান শুবমান গিলের।
ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে ভারতের নবম ডাবল সেঞ্চুরি এটি। তবে ওপেনিংয়ে ডাবল সেঞ্চুরি ছিল
আগে কেবল একজনেরই। ১৯৭৯ সালে ওভালে ২২১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গাভাস্কার,
যেটিকে মনে করা হয় তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসগুলির একটি। চতুর্থ ইনিংসে
৪৩৮ রান তাড়ায় ভারত ৮ উইকটে ৪২৯ রান তোলার পর ড্র হয় ম্যাচ।
দেশের মাঠে
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ভারতীয় ওপেনার জয়সওয়ালই। ১৯
চারের পাশে ইনিংসটিতে ৭টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ভারতের হয়ে টেস্টে এক ইনিংসে
এর চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন কেবল নাভজোত সিং সিধু ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৪ রানের ইনিংসে ৮টি ছক্কা মারেন সিধু। ২০১৯
সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৪৩ রানের ইনিংসে ৮ ছক্কায় সিধুকে স্পর্শ করেন
মায়াঙ্ক।
জয়সওয়ালের ক্যারিয়ারের কেবলই শুরু। ছক্কার ঝড় নিশ্চয়ই আরও দেখা যাবে তার ব্যাটে।