তানভীর
দিপু:
মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে কুমিল্লা সিটি মেয়র পদে উপ-নির্বাচন। এরই
মধ্যে বেড়ে গেছে সাড়ে ১২ হাজার ভোটার। শুধুমাত্র মেয়র পদে নির্বাচন হওয়ায়
নতুন ভোটাররা এখন পরিনত হয়েছে ফ্যাক্টরে। জয় পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে
তাদের পূর্ণ ভোট। তাই নতুন ভোটারদের মন জয় করতে ভোট দিতে উৎসাহের
পাশাপাশি, ছুটছে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি। স্মার্ট সিটি গড়ে দেয়া থেকে শুরু
করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থারও আশ^াস দিচ্ছেন প্রার্থীরা। এমনকি নিজেদেরকেও
তরুন দাবি করে প্রার্থীরা বলছেন, নতুনদের ভোট থাকবে তারুণ্যের পক্ষেই।
আসন্ন
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট
নেওয়া হবে। এবার ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। এর মধ্যে ১
লক্ষ ১৮ হাজার ১৮২ জন পুরুষ ভোটার এবং ১ লক্ষ ২৮ হাজার ২৭৮ জন নারী ভোটার
রয়েছেন। এছাড়া ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। বিগত নির্বাচনে সিটিতে
ভোটার ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার
৯২ জন, পুরুষ ভোটার ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এবার উপ-নির্বাচনে পুরুষ ও
নারী ভোটার বেড়েছে ১২ হাজার ৫৩৮ জন।
কুমিল্লার রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আহসানুল কবির বলেন, যেহেতু গত নির্বাচনে মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয়
নির্ধারিত হয়েছিলো। সেক্ষেত্রে এবারও যদি কোন বিশেষ কারণে কোন বিশেষ
প্রার্থীর পক্ষে তরুণ ভোটাররা ঝুকে যায় তাহলে ফলাফল ওই প্রার্থীর পক্ষেই
যাওয়া অস্বাভাবিক হবে না। কারণ, এবার শুধুমাত্র মেয়র নির্বাচন; যেখানে
অনেকের আশংকা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা কম হতে পারে- সেদিকে নতুন ভোটাররা
তাদের প্রথম ভোট দিতে যে উৎসাহ দেখান তাতে করে তারা ফ্যাক্টর হতেই পারেন।
এদিকে
নতুন ভোটারদের মন জয় করতে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। বিএনপি
নেতা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল হক সাক্কু ছাড়া বাকি তিন প্রার্থীই
নিজেদেরকে তরুণ পরিচয় দিয়ে তরুণ ভোটারদের কাছে সমর্থন চাইছেন। মনিরুল হক
সাক্কুও নিজেকে তরুণদের জন্য উজাড় করে দিবেন জানিয়ে প্রচারণায় বলেন, আমি
বলবো তারুণ্যের প্রথম ভোট হোক এক ভালো মানুষের পক্ষে। সেটা আমিও হতে পারি ,
আমার সাথে আরো অন্য তিন জনের যে কেউ হতে পারে। কিন্তু ভোট দিতে হবে- ভোট
দিলেই আপনি জিজ্ঞেস করতে পারবেন , ভোট দিয়েছি কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন
করেননি কেন?
বিভিন্ন প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেত্রী বাস প্রতীকের তাহসিন
বাহার সূচনা বলেন, আমি নিজে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। আমি সব
সময়ই তরুণদের পাশে থাকি। তরুণদের জন্য এই সিটি গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিচ্ছেন- আমি সেগুলোই এই
নগরীতে বাস্তবায়ন করবো। আমি খুবই আশাবাদী নতুন ভোটাররা তাদের প্রথম ভোট
আমাকেই দিবেন।
আরেক আওয়ামী লীগ নেতা নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম
প্রচারণায় তরুণ নতুন ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আি নির্বাচিত হলে মাদক ও
বেকারমুক্ত নগরী গড়বো। আমি চাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণদের
ডিজিটালাইজেশন করে কর্মসংস্থান গড়ে দিতে, বেকারমুক্ত নগর গড়তে। তাই আমার
প্রত্যাশা নতুন ভোটাররা আমাকেই বেছে নিবেন।
বিএনপির অপর প্রার্থী ঘোড়া
মার্কার নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, গত ২০২২ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই
আমাকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন ও ভোট দিয়েছে। তাদের কথা মাথায় রেখেই আমি
প্রতিশ্রুতি দিতে চাই- এবারের নির্বাচনে আমি জয়ী হলে একটি মাদক ও
সন্ত্রাসমুক্ত কুমিল্লা গড়বো। চাঁদাবাজি ও ইভটিজিংমুক্ত নগরী উপহার দিবো।
এবারের
নির্বাচনে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ প্রার্থী বিএনপির টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মনিরুল
হক সাক্কু। তবে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গণে তার পথচলা তরুণ বয়স থেকেই। অপরদিতে
সদ্য নতুন প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সামাজিক সংগঠন
জাগ্রত মানবিকতার সাধারণ সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা; তিনি এবারই প্রথম
কোন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির নিজাম উদ্দিন
কায়সার ২০২২ সালে নির্বাচনে অংশ নেন এবং সে নির্বাচনে তিনি নিজেকে ফ্যাক্টর
হিসেবে প্রমানিত করেন। কুমিল্লার ছাত্র রাজনীতিতে পরিচিত এই মুখ এবারও
প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হাতি
প্রতীকের নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম ২০১২ সালের সিটি নির্বাচনে অংশ নেন।
তারও রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।