রমজানের
শুরুতে বেশ গরম থাকলেও এখন দাম কমছে শাক-সবজির। কাঁচাবাজারে ঘুরলে যেন
কিছুটা স্বস্তি মিলছে। শুক্রবার বাজারে দেখা গেছে, শাক-সবজি ও ডিমের দাম
কমতির দিকে। তবে বাজার গরম করতে শুরু করেছে আলু। রোজার শুরুতে বেগুনের কেজি
ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, দামাদামি করলে মিলছে
৩০ টাকাতেও।
শসার কেজি ছিল ১০০ টাকার কাছাকাছি, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। টমেটো ছিল ৭০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ এ।
কাঁচা
মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ ও বিভিন্ন প্রকারের শাকের দাম গত সপ্তাহের
তুলনায় কমেছে বলে জানিয়েছেন সবজি বিক্রেতা মো. রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, এখন
আর রোজার শুরুর দিকের মতো বেশি দাম হবে না। রোজা যত যাবে আর ঈদ যত কাছাকাছি
আসবে দাম তত কমতে থাকবে। চাল ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জানান, তিনি ৩০ টাকা
কেজি বেগুন, ৪০ টাকায় শসা কিনেছেন।
ফের চড়ছে আলু:
টানা এক বছর চড়া
থাকা আলুর দাম কমতে শুরু করেছিল ফেব্রুয়ারি থেকে। মার্চের শুরুতে তা ৩০
টাকার নিচে নেমে আসে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানিও শুরু হয়। কিন্তু রোজায় এই
সবজিটির দাম চড়ছে, যখন অন্যগুলোর দাম পড়তির দিকে। সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে
আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। তবে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২
থেকে ১৪ টাকা।
কারওয়ানবাজারের পাইকারি দোকান বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের
বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, “বগুড়ার সাদা আলু রমজানের আগে ২৬ থেকে ২৮ টাকা
কেজিতে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ৩২ থেকে ৩৩ টাকা পাইকারিতেই।”
দাম কেন বাড়ল, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মৌসুম শেষের দিকে আলু হিমাগারে সংরক্ষণ হচ্ছে। তাই মোকামের কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই দাম বাড়ছে।”
খুচরা বিক্রেতা আবু বকর বলেন, “সপ্তাহখানেক ধরে ধাপে ধাপে আলুর দাম বাড়তেছে। খুচরায় ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে এখন।”
আরেক
পাইকারি দোকান বিক্রমপুর ভান্ডারের বিক্রেতা শামছুল আলম বলেন, “মোকাম থেকে
বেশি দামে কিনতে হইতাছে। মোকামে মালের দাম বাড়ায়ে দিছে।”
তিনি রংপুরের আলু ৩৩ টাকা করে বিক্রি করছেন বলে জানান। বাকি টাকা খুচরা বিক্রেতার মুনাফা।
বিক্রেতা ও সরবরাহকারীরা বলছেন, আলু এখন বেশি রয়েছে মুন্সিগঞ্জে। বগুড়া ও রংপুরেও কিছু আছে।
মেহেদি
হাসান নামে এক ক্রেতা এই চিত্রে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি দোকানিকে
বলছিলেন, “প্রথম রোজায়ও তো ৩০ টাকায় কিনলাম। তখন শাক-সবজির দাম বেশি ছিল।
এখন সবকিছুর দাম কমতেছে আর আপনারা আলুর দাম বাড়াচ্ছেন।”
মুন্সীগঞ্জ থেকে
ঢাকার কারওয়ান বাজারে আলু সরবরাহকারী বাদল ব্যাপারী বলেন, “আলুর দামে
গ্রামেই বেড়েছে। মুন্সীগঞ্জ বাজারে ২৮ টাকা কেজি। আর ঢাকায় পরিবহন খরচ
কেজিতে ২ টাকা করে। মোট ৩০ টাকা কেজিতে ঢাকায় দেই আমরা।”
আলুর সংকট
রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এবার আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। যেই বিঘাতে আলু হয়
দেড়শ মণ, এবার হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ মণ মাত্র। আর সিজন শেষ পর্যায়ে থাকায় এখন
হিমাগারে চলে যাচ্ছে আলু। তাই দাম বেড়েছে।”
বগুড়া শেরপুরের আলু
শেষপর্যায়ে বলে জানিয়েছেন বগুড়া থেকে কারওয়ান বাজারে আলু সরবরাহকারী মো.
মশিউর রহমান। তিনি বলেন, “বেশ কয়েকদিন ধরেই আমাদের মোকামে আলুর সংকট দেখা
দিয়েছে।”
সংকট কেনো হয়েছে – প্রশ্নে তিনি বলেন, “ক্ষেতে আলু শেষ। বাকিটা গেছে হিমাগারে। তবে হিমাগার এখনও ভরে নাই।”
পেঁয়াজের দাম কমে ফের বাড়ল:
রমজানের
শুরুতে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশিতে বিক্রি হওয়া রান্নার উপকরণটি কদিন আগে
৫৫ টাকায় নেমে এলেও আবার সেখান থেকে ৫ টাকা বেড়েছে কারওয়ানবাজারে। আর
পাইকারিতে ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কদিন আগে পাইকারিতে দাম
৪৫ থেকে ৫০ টাকায় নেমেছিল।
পেঁয়াজের পাইকারি দোকান মেসার্স মাতৃভান্ডার
এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা সজিব শেখ বলেন, “পাইকারিতে দাম এখন ৫০ থেকে ৫৬
টাকা করছি। দুইদিন আগেও ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি করেছি।”
খুচরা
ব্যবসায়ী নূর ইসলাম বলেন, “ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা
কেজি দরে। আর পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।”
ফার্মের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। যা রমজানের শুরুতে হালি প্রতি বিক্রি হতো ৪৫ টাকা দরে।
গরুর মাংস আটশ ছুঁইছুঁই:
মোহাম্মদপুর
কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি গরুর মাংস কিনেছেন
৭৮০ টাকা দরে। সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন সংস্থা এই মাংসের যে ন্যায্যমূল্য
ঠিক করেছে, তা থেকে দাম একশ টাকারও বেশি। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি গরুর
মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের তুলনায়
কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। রমজানের শুরুতে এক লাফে চড়েছিল ২৩০ টাকা কেজিতে।
তবে এখন বাজারে তা নেমেছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। পাড়া-মহল্লায় দাম বেশি ২১৫
থেকে ২২০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে নূরজাহান চিকেন ব্রয়লার হাউজের বিক্রেতা
ছায়েদুল হক ভুঁইয়া বলেন, “দুইদিন ধরে ২১০ টাকা হয়েছে। আর রমজানের শুরুতে
দাম ছিল ২২০ টাকা বা তারও বেশি।”
মুরগি কিনতে আসা রবিউল আলম বলেন,
“সবকিছুর দাম কমার দিকে থাকলেও মুরগি কমার কোনো নাম গন্ধ নাই। ব্যবসায়ীরা
বলে আসছে তাদের নাকি উৎপাদন খরচ বেশি। এখন কাকে কী বলব?”