আগেই
কথা ছিল ভাগনি মারিয়া আক্তারের এসএসসি পরীক্ষার পর ভৈরবে মামা কনস্টেবল
সোহেল রানা বাসায় বেড়াতে যাবেন। পরীক্ষার শেষ হওয়ার পর গত শনিবার বিকালে
সোহেল রানা নিজেই গ্রামের বাড়িতে এসে ভাগনি মারিয়াকে বেড়াতে নিয়ে যান তার
ভৈরবের বাসায়। পরে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রলারে করে মেঘনা নদীতে
ঘুরতে বের হয়ে মাঝ নদীতে ট্রলারটিকে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দিলে ট্রলারটি
ডুবে যায়। এতে নিখোঁজ হয় কনস্টেবল সোহেল রানা, তাঁর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার,
চার বছরের মেয়ে মাহমুদা আক্তার ইভা ও তিন বছরের ছেলে রাইসুল ইসলাম। এসময়
ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ভাগনি মারিয়া আক্তার (১৫)।
পরে শনিবার বিকালে
প্রায় ২০ ঘন্টা পর মৌসুমীর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। রাত
১১টার দিকে মরদেহটি দেবিদ্বার ফতেহাবাদ গ্রামে নিয়ে আসলে পুরো গ্রামে
শোকের ছায়া নেমে আসে। রাত ১২টার দিকে জানাজা শেষে মৌসুমীকে পারিবারিক
কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, মেঘনায় নিখোঁজ কনস্টেবল সোহেল
রানা’র (৩২) বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব
ফতেহাবাদ গ্রামে। তার বাবা সাবেক সেনা সদস্য আবদুল আলিম। সোহেল ভৈরব
হাইওয়ে থানায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে পুলিশ তিনি
কনস্টেবল পদে যোগ দেন।
শনিবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে সোহেল রানার
গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। একই পরিবারের চারজনের
মৃত্যু মানতে পারছে না কেউ, শোকে কাতর পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর পর
ঘটনাস্থলে ছুটে যান সোহেল রানার বাবা-মাসহ আত্মীয়। বাড়িতে সোহেল রানার ছোট
ভাইয়ের স্ত্রী রুমি আক্তার বার বার চিৎকার-আর্তনাদ করছেন, শোকে স্তব্ধ পুরো
গ্রাম। শত শত লোকজন ভীর করছেন সোহেল রানার বাড়িতে। বাড়ির স্বজনরা খানিক পর
পর ফোন করে মরদেহ পাওয়া গেছে কিনা খবর নিচ্ছেন।
সোহেল রানার ছোট
ভাইয়ের স্ত্রী রুমি আক্তার বলেন, গত শনিবার সোহেল ভাই রেশনের চাল-ডাল, আঠা
নিয়ে বাড়িতে এসেছিল, এরপর মারিয়াকে বেড়াতে ভৈরবে চলে যায়। মারা যাওয়ার
একদিন আগে আমার শ্বশুরকে ফোন করে বাড়ির সবার আছে খোঁজ খবর নেন। তাকে এভাবে
কারও খোঁজ খবর নিতে কোনদিন দেখিনি। মারিয়াই প্রথম আমার শ্বশুরকে ফোনে এ
ঘটনা জানায়।
সোহেল রানার চাচাত ভাই ইমরান হোসেন বলেন, গত শনিবার বাড়িতে
এসে ভাগনি মারিয়াকে ভৈরবে বেড়াতে যান সোহেল নিজেই। ভাগনির অনুরোধে
শুক্রবার দুপুরে সোহেল তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মেঘনা নদীতে পর্যটন
বাহী ট্রলারে করে ঘুরতে যান। ট্রলারে আরও ২০জন পর্যটক ছিল। পরে কেউ একজন
ছবি তোলার জন্য ট্রলারের মাঝিকে অনুরোধ করলে মাঝি তার হাতের বৈঠা ছেড়ে ছবি
তুলে দিচ্ছিলেন। এ সময় ট্রলারটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। তখন বিপরীত
দিক থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দিলে সেটি উল্টে
যায়। তাদের মরদেহ এখনও পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে থাকা
কনস্টেবল সোহেল রানার চাচাত ভাই ইউসুফ বিকালে মোবাইল ফোনে জানান, নৌ-পুলিশ,
ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ ডুবুরিরা এসে মরদেহ সন্ধান করছেন, চারজনের মধ্যে
মৌসুমীর লাশ পাওয়া গেছে। লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাকি তিনজনের লাশ
পাওয়া যায়নি। এখন খোঁজা বন্ধ করা হয়েছে আগামীকাল (রোববার) আবার
খোঁজাখোঁজি শুরু হবে।
ফতেহাবাদ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক
মেম্বার বলেন, খবর পেয়ে আমিসহ সোহেলের বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনরা ভৈরবে ছুটে
যাই, সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। ছেলে ও নাতি-নাতনিকে হারিয়ে
সোহেলের বাবা মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। বাড়িতে যারা আছেন সবাই শোকে পাথর
হয়ে গেছেন। তাদেও আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।