আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির
ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র
বাঙালিদের ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তান
সেনাবাহিনী। মুহূর্ত বিলম্ব না করে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
ওয়্যারলেস
এবং বিশেষভাবে তৈরি বেতারযন্ত্রের কম্পনতরঙ্গে তা ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। ওই
রাতেই রাজারবাগ, পিলখানায় থাকা বাঙালি বীর যোদ্ধারা বুকের রক্ত দিয়ে
প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অস্ত্র তুলে নেন বিভিন্ন
সেনানিবাসে থাকা বাঙালি সৈনিকরাও। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত জাতি হানাদার
বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমেই কঠোরতর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৯ মাস ধরে চলে
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। জাতি আজ
যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫৪তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো
মানুষ শ্রদ্ধা জানাবে স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের।
জাতি শপথ নেবে সব
ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করার। এই দিনে আমরা সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং
যাঁরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
করছি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশের ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সব
ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রকে।
পাকিস্তানিরা এই দেশটাকে শুধু শোষণই
করেছে, বাঙালির কোনো অধিকারই তারা স্বীকার করেনি। তাদের অব্যাহত
শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান।
সত্তরের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা না
দিয়ে শুরু করেছিল বাঙালিনিধন। ৯ মাস ধরে চালিয়েছে নিষ্ঠুর গণহত্যা। কিন্তু
বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে তারা দমাতে পারেনি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের
বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে
স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র কখনো থেমে থাকেনি। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে
হত্যা করা হয়। দেশ চলে যায় স্বাধীনতাবিরোধীদের কবজায়। একাত্তরের ঘাতকরা
ফিরে আসে রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার
এবং ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চলতে থাকে। এবারও তারা সফল হতে পারেনি। সব
ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে।
দেশে আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের বিচার হচ্ছে। দেশ ক্রমে
এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন
করেছি। অনেক খাতেই বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে
অবাক চোখে দেখছে বিশ্ব। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে টানেল
চালু হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বিশাল সব প্রকল্পের
বাস্তবায়ন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে
এগিয়ে চলেছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানি শাসকরা বাংলাদেশে সব
রকমের দুঃশাসন কায়েম করেছিল বলেই দুই যুগের দুঃখ-কষ্ট-ভোগান্তির পর সাড়ে
সাত কোটি বাঙালি একযোগে রুখে দাঁড়িয়েছিল। দেশের উন্নয়নকে শক্ত ভিতের ওপর
প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন একাত্তরের সেই ইস্পাতকঠিন ঐক্য।