দক্ষতা
উন্নয়নের মান ধরে রাখতে না পারায় শতাধিক বেসিক ‘ট্রেড কোর্সের’ নিয়ন্ত্রণ
হারাচ্ছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে
৩৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ের সংক্ষিপ্ত কোর্সগুলো হারাচ্ছে বোর্ড। আগামী ১
জুলাই থেকে দক্ষতা সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করবে জাতীয় দক্ষতা
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডি)।
শুধু তাই নয়, এসএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি
(ভোকেশনাল), দাখিল (ভোকেশনাল) ও আলিম (ভোকেশনাল) সার্টিফিকেটের সনদ এখন
থেকে এনএসডি’র সঙ্গে আপাতত দ্বৈতভাবে দিতে হবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা
বোর্ডকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো.
আলী আকবর খান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্কিল সার্টিফিকেট
আমরাও দেই, দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও দেয়।’
চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান
বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছিলেন একই সিস্টেমে সব মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ
হবে। কিন্তু এনএসডি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব
সভাপতি। তিনি বলেছেন যে এখন থেকে স্টিল অংশটা এনএসডি দেখবে। সেটা নিয়ে দুই
বছর ধরে আলোচনা চলছিল। এখন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনএসডি। এটা যদি তারা
করতে চায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর টার্গেটে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ তাদের তো
লোকবল নেই।’
দ্বৈতভাবে সনদ দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক
সনদ আমরাই দেবো। তার পাশাপাশি দক্ষতার সনদ দ্বৈতভাবে দেওয়া হবে। যেমন ধরেন,
কোনও শিক্ষার্থী সিভিল পাস করেছে, সে কিন্তু প্লাম্বিং পাস করেছে, অথচ সে
প্লাম্বিংয়ের কাজ করতে পারে না। কিন্তু একজন মেকানিক তা পারে। আমরা তো
অ্যাকাডেমিক সনদ দেবোই, কিন্তু সে যদি আরও দুটো দক্ষতা অর্জন করে সে
ক্ষেত্রে দ্বৈতভাবে সনদ দেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম
ও দুর্নীতির কারণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ অর্জন করার পরও
শিক্ষার্থীদের দক্ষতার ঘাটতির অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষায় ভালো
ফলাফল করে সনদ অর্জনের পরও দক্ষতার ঘাটতি থাকছে। অবহেলার কারণে বোর্ড
পরীক্ষার খাতার খোঁজ না থাকায় শত শত শিক্ষার্থীকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে
হচ্ছে। এরকম বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য দায়ী বোর্ডের স্থায়ী
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রেষণে আসা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের
বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাদের বের করে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। বিভিন্ন
সময় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাও চেষ্টা করে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ব্যর্থ
হয়েছেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সে কারণে
চেয়ারম্যানকেও গুরুত্ব দেন না বোর্ডের স্থায়ী স্টাফরা।
কারিগরি শিক্ষা
বোর্ডের স্থায়ী স্টাফদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের
চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি, অনেকটা ইমপ্রুভ
হয়েছে। আশা করি আরও হবে।’
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নানা দুর্নীতির এই
পরিস্থিতিতে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে মনোযোগী
হয়। বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী
কমিটির ১২তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩তম সভায়
দক্ষতা সংক্রান্ত (৩৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত) প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কোর্স পরিচালনার
সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১ জুলাই থেকে দক্ষতা
সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড (সিএস), কোর্স
অ্যাক্রিডিটেশন ডকুমেন্ট (সিএডি), কম্পিটেন্সি বেজড কারিকুলাম (সিবিসি)
প্রণয়ন, অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা এবং সনদায়নসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এছাড়া
এসএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (ভোকেশনাল), দাখিল (ভোকেশনাল) ও আলিম
(ভোকেশনাল) সার্টিফিকেটের সঙ্গে দ্বৈতভাবে দক্ষতার সনদ আপাতত বাংলাদেশ
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বিটিইবি) দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভার
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ৩৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত দক্ষতা
প্রশিক্ষণ, অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা ও সনদায়ন এনএসডি’র সঙ্গে সমন্বয় করে
পরিচালনা করতে হবে। এনএসডির কারিকুলামে ইংরেজি ভাষার প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত
করতে হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিল/সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা
স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে এমন
দেশগুলোর দক্ষতার চাহিদাকে বিবেচনা করে দেশভিত্তিক সিএস, সিএডি ও সিভিসি
প্রণয়ন করতে হবে। এসব প্রণয়নে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো
(বিএমইটি) ও বাংলাদেশের হাইকমিশন/দূতাবাসগুলোকে সম্পৃক্ত করে চাহিদা
পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এ লক্ষ্যে এনএসডির কার্যনির্বাহী কমিটিতে পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়কে কো-অপ্ট করতে হবে।
ন্যাশনাল হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট
ফান্ডের (এনএইচআরডিএফ) পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার
ক্ষেত্রে ওয়েল্ডিং, আইসিটি, কেয়ারগিভিং, হেভি ইকুইপমেন্ট অপারেশন,
প্লাম্বিং, পাইপ ফিটিং, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, হাউজকিপিং,
ড্রাইভিংসহ দেশে ও বিদেশে চাহিদাসম্পন্ন অকুপেশন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের
(ফোরআইআর) সম্ভাবনা বিবেচনা করতে হবে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে সহজ করা আবেদন
ফরমসহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এনএইচআরডিএফ থেকে আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আইএসসি, এনএইচআরডিএফ এবং এনএসডির
প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নিয়মিত পরিবীক্ষণ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড
থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৩ হাজার ৭০০টি সরকারি-বেসরকারি ও
একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ১২১টি কোর্স চলমান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে
প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ তরুণ-তরুণীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া
হচ্ছে।
এনএসডিএ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার নীতি
বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই সংস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর চেয়ারপারসন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গভর্নিং বডিতে আছেন মন্ত্রী, সচিবসহ মোট ২৯ জন।
গত ৫ বছরে এনএসডিএ থেকে প্রায় ১১ হাজার প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দেওয়া হয়েছে।