যেকোনো দেশে মানুষই সম্পদ। মানুষের
শ্রমে-ঘামে-মেধায়-পরিকল্পনায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। গত
রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল
স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস) ২০২৩’-এর ফল প্রকাশ করেছে। এসভিআরএস-২০২৩-এর তথ্য
অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার হয়েছে।
২০২২ সালে
ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে নারী আট কোটি ৭৩ লাখ ৯০
হাজার ও পুরুষ আট কোটি ৪২ লাখ। জনসংখ্যা বাড়লেও গড় আয়ু সামান্য কমেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২.৪ বছর, যা
২০২৩ সালে হয়েছে ৭২.৩ বছর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের
‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে দেশে
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ছিল ৬৩.৩ শতাংশ, যা পরের বছরে কমে
গেছে। ২০২৩ সালে ওই হার হয়েছে ৬২.১ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শহর-গ্রাম
উভয় এলাকায়ই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহাকারী কমেছে। তবে শহরের চেয়ে
গ্রামে কমেছে বেশি।
কিন্তু তার পরও দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে দেশে
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২৩ সালে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার
ছিল ১.৩৩ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৪০ শতাংশ। বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল
স্ট্যাটিসটিকস থেকে কিছু ইতিবাচক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যেমন-২০২৩ সালে দেশে
তালাকের প্রবণতা কমেছে। দাম্পত্য বিচ্ছেদের হারও কমেছে।
বিবিএসের
স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্য অনুযায়ী সাত বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী
জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালে ৭৭.৯ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল
৭৬.৮ শতাংশ। নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে সাক্ষরতা প্রায় একই হারে বেড়েছে। তবে
একটি খারাপ খবর এসেছে বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যে। বলা
হয়েছে, দেশের পাঁচ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশ গত
বছর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার বাইরে ছিল। ওই সময় অর্থাৎ ২০২৩ সালে তারা কোনো
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হিসেবে ছিল না। মোট জনসংখ্যার হিসাবে শিক্ষার
বাইরে থাকা শিশু ও তরুণের এই সংখ্যা দুই কোটি ৬২ লাখের বেশি। বিবিএসের
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রতি হাজারে ৮.৭৮ জন দেশ ছেড়েছে। ২০২২ সালে
এই হার ছিল প্রতি হাজারে ৬.৬১ জন।
এক বছর আগে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়
অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের উন্নয়ন
কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন তরুণ
জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণ কর্মক্ষম শক্তিকে কাজে লাগানোই
দেশের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও ইউএনডিপির মতে, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।
ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড
অবস্থার সুযোগ কাজে লাগাতে হলে জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে
হবে। সেটি করতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।