বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের জন্য দুঃসংবাদ। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।
গত
৩১ অক্টোবর বন্ধ হয়েছে ওমানের শ্রমবাজার। এরপর আছে কাতার। জনশক্তি
রপ্তানিতে এই তিন দেশের পরই ছিল মালয়েশিয়ার অবস্থান। ২০০৮ সাল পর্যন্ত
দেশটি বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির বড় বাজার হিসেবে গড়ে ওঠে।
১৯৮৯ সাল
থেকে নিয়মিতভাবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। তবে
কর্মীদের শোষণ, প্রতারণা ও বিভিন্নভাবে হয়রানির কারণে মালয়েশিয়া সরকার বেশ
কয়েকবারই বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। প্রথম
নিষেধাজ্ঞাটি এসেছিল ১৯৯৬ সালে, দ্বিতীয়টি ২০০১ সালে, তৃতীয়টি ২০০৯ সালে
এবং চতুর্থটি আসে ২০১৮ সালে। ২০০৯ সালে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের
পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে
কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং বাংলাদেশ থেকে
মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু করে।
প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায়
বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। এ ছাড়া সেখানে লাখ দুয়েকের মতো বাংলাদেশি অবৈধভাবে
অবস্থান করছেন, যাঁরা সাধারণত পর্যটন ভিসায় বা অন্য উপলক্ষে কয়েক দিনের
ভিসায় মালয়েশিয়ায় এসে থেকে গেছেন বা বেশি পারিশ্রমিকের লোভে কর্মরত স্থান
থেকে পালিয়ে অন্যত্র কাজ করছেন। আবার এর ভিন্নচিত্রও আছে। মালয়েশিয়ার
শ্রমবাজারে কাজ করতে যাওয়া বেশির ভাগ শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মাসের
পর মাস অপেক্ষা করেও কাজ মেলেনি।
এ ছাড়া নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক
নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কর্মীরা। সেখানকার নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে
বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও।
কিন্তু নানা জটিলতা ও এক
শ্রেণির এজেন্সির প্রতারণার কারণে এই বাজারের সুফল মেলেনি। এরপর সরকারি
উদ্যোগে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। দুই দেশের মধ্যে সরকারি
পর্যায়ে আলোচনার পর নতুন করে কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। একজন কর্মী ৮০
হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় আসার কথা থাকলেও সাড়ে চার লাখের কমে কেউ আসতে
পারেননি।
এসব অনিয়মের কারণে বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যেসব কর্মী এর মধ্যে ভিসা পেয়েছেন
বা পাবেন, তাঁদের আগামী ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হবে। এরপর
বাংলাদেশ থেকে আর কোনো কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন না। কর্মীদের
জন্য ভিসার আবেদনের সর্বশেষ সময় ৩১ মার্চ।
আমাদের এখন নতুন শ্রমবাজার
খুঁজে বের করতে হবে। দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। শ্রমশক্তি
হিসেবে বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিদেশি ভাষায় পারদর্শী করে তোলা প্রয়োজন। সঠিক
প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও
দক্ষতাসম্পন্নদের কদর বাড়ছে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই
জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। আমরা আশা করব, আমাদের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট
সবার সহযোগিতায় জনশক্তি রপ্তানিতে নতুন করে জোয়ার আসবে।