ঈদের দিন যত এগিয়ে আসছে কুমিল্লার শপিংমলগুলোতে ততো ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সরগরম হয়ে উঠছে পোশাক বিপনীগুলো। গতকাল (শুক্রবার) কুমিল্লা খন্দকার হক ও সাত্তার খান শপিংমল, নিউ মার্কেট এবং ছোট-বড় সব শপিংমলে গিয়ে ক্রেতাদের উপচে পরা ভিড় দেখা যায়। ঈদের পছন্দের পোশাক কেনার জন্য ক্রেতারা ঘুরছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। বিভিন্ন ধরনের পোশাক দেখিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন বিক্রেতারা।
সাপ্তাহিক ছুটি পেয়ে নগরীর তালপুকুর পাড় থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন সরকারি চাকুরিজীবী মু. শাহিন আলম। তিনি কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ভিড় এড়ানোর জন্য ঈদের ১২/১৩ দিন আগে কেনাকাটা করতে এসেছি। কিন্তু তাড়াতাড়ি এসেও কোনো লাভ হয়নি। পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করতে পারি নাই। ঈদের আগে আবার আসতে হবে।
ছুটির দিনের বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট শপিংমলের বেশিরভাগ বিক্রেতারা। ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন ব্যান্ডের পোশাক নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসা শপিংমলের বিক্রেতারা অন্য দিনের তুলনায় দ্বিগুন বেশি বিক্রি করেছেন আজ।
খন্দকার হক শপিংমলের পোশাক দোকানদার ফরহাদ হোসেন বলেন, দর কষাকষির মাধ্যমে ক্রেতারা পছন্দের পোশাক ক্রয় করছেন। আমরাও সীমিত লাভে বিক্রি করছি। ঈদকে ঘিরে পাঞ্জাবি বিক্রির পরিমাণটা একটু বেশি।
পোশাকের সাথে সাথে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছে জুতা দোকানে। খন্দকার হক শপিংমলের জুতা দোকানদার রাজন বলেন, ঈদকে ঘিরে স্নিকারস বিক্রি হচ্ছে বেশি। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত লাখ খানেক টাকা বিক্রি হয়েছে। লোফার, টার্সেল, স্লিপার, ফরমাল এবং কনভার্স সহ সবগুলো আইটেমই বিক্রি ভালো হচ্ছে।
ছুটির দিন হওয়ায় শপিংমলের গ্রাউন্ড ফ্লোর, ফাস্ট ফ্লোর এবং সেকেন্ড ফ্লোরে অন্য দিনের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল নারী ক্রেতার সংখ্যা। খন্দকার এবং সাত্তার খান শপিংমলের সামনে উপচে পরা ভিড়ে দিশেহারা হয়ে পরে ক্রেতারা। ভিড় এড়িয়ে পছন্দের পোশাক কেনার জন্য এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটছেন নারী ক্রেতারা।
নগরীর ঝাউতলা থেকে একমাত্র কন্যা লায়লার জন্য ঈদের শপিং করতে আসা ফাহিমা আক্তার কুমিল্লার কাগজকে বলেন, শপিংমলের সামনের প্রচন্ড ভিড় এড়িয়ে ভেতরে আসছি এখানে দেখি আরও বেশি ভিড়। শুধু জামা কিনেছি, বেশি কিছু কিনতে পারি নাই।
কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে রাস্তার পাশে ছোট কাঠের বক্স, ভ্যান এবং অস্থায়ীভাবে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানগুলো নি¤œবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সবচেয়ে বড় শপিংমল। বড়-বড় শপিংমলের সাথে পাল্লা দিয়ে ফুটপাতের এই ছোট ছোট দোকানগুলোতেও বেড়েছে ঈদের বেচাকেনা।
কান্দিরপাড় টাউন হলের সামনে কাঠের বক্সের মধ্যে ছেলেদের বিভিন্ন পোশাক নিয়ে বসে আছেন ফয়েজ মিয়া। তিনি বলেন, মাত্র শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। আজ ছুটির দিন হওয়াতে বেশি বিক্রি করেছি। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।
ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড়ের মধ্যে দেখা যায় কম দামে পছন্দের প্যান্ট-শার্ট কেনার জন্য নি¤œ-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা ছুটে বেড়াচ্ছেন নগরীর নিউমার্কেটে। দাম কম এবং মান ভালো হওয়ায় ঈদের কেনাকাটার জন্য এই মার্কেটকটিই অগ্রাধিকার পাচ্ছে তাদের নিকট।
নগরীর টমছমব্রিজ থেকে ঈদের প্যান্ট এবং পাঞ্জাবি কিনতে আসেন তারেক। তারেক বলেন, ৩ হাজার টাকা নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। ঈদের জন্য ১৪’শ টাকা দিয়ে দুইটা প্যান্ট নিয়েছি। ৮’শ টাকা দিয়ে একটা ভালো পাঞ্জাবি কিনেছি। বাকি ৮’শ টাকা দিয়ে এক জোড়া জুতা কিনলে ঈদের কেনাকাটা শেষ হবে।
পোশাক দোকানগুলোতে ঈদের বেচাকেনা জমজমাট হলেও ক্রেতা শূন্যতায় ভুগছেন কসমেটিকস দোকানদাররা। খান কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী বাদল বলেন, সবাই এখনও জামা-কাপড় কিনছে। সব কেনাকাটা শেষ করে তারা কসমেটিকস কিনবে। তবে আজ ছুটির দিন হওয়াতে ভালোই বিক্রি করতে পেরেছি।
ঈদের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে সরগরম হয়ে উঠছে শপিংমলগুলো। ঈদের শপিং শেষ সকল মুসলমানদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটবে এমনটাই প্রত্যাশা।