এক
সপ্তাহ ধরে বিক্রি হচ্ছে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। ঈদে বাড়ি ফিরতে
চাওয়া যাত্রীরা ইতোমধ্যে রাজধানীর বাইরে যাওয়ার টিকিট কিনেও ফেলেছেন।
শনিবার (৩০ মার্চ) অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ। ট্রেনের টিকিট পেতে
ওয়েবসাইটে কোটির বেশি হিট পড়েছে। তবে বিপরীত চিত্র বাসে।
প্রতিটি বাসের
গড়ে ১০ থেকে ১২টি সিটের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। বাকি সিটগুলো
রাজধানীর বিভিন্ন কোম্পানির কাউন্টারে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে
পরিচিত বাসগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। বাসপ্রতি দুই-একটি সিট
বাকি আছে। তবে অজনপ্রিয় বাসগুলোর অনেক টিকিট এখনও অবিক্রীত রয়ে গেছে। এসব
বাস ঈদের আগে ছুটি পাওয়া বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক ও অন্যান্য স্বল্প আয়ের
মানুষদের যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আছে।
রবিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর
গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, কোনও কাউন্টারের সামনেই নেই টিকিট
প্রত্যাশীদের ভিড়। অল্প কিছু যাত্রী এলেও তারা আজকের দিনের টিকিট কিনছেন।
এদিকে অবসর সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা। পরিচিত
বাসগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুতেই শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব কাউন্টারের
কর্মীদের এখন আর কোনও ব্যস্ততা নেই। ঈদের আগ পর্যন্ত তেমন কাজের চাপ থাকবে
না বলে জানান তারা।
অন্যদিকে নামডাক নেই এমন বাসগুলোর কাউন্টারের
কর্মীরা যাত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন। কোনও যাত্রী আসতে দেখলেই কোথায় যাবেন,
কবে যাবেন এসব জানতে চাচ্ছেন। কোনও কোনও কাউন্টার থেকে বাস ও গন্তব্যের নাম
বলে টিকিট প্রত্যাশীদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছিল।
এদিকে দুই
একজন যাত্রী যারা অগ্রিম টিকিট কিনতে আসছিলেন তারা পছন্দের বাস কাউন্টারে
গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। এসব বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এক-দুটি টিকিট
পাওয়া গেলেও সেগুলো পেছনের আসন হওয়ায় কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না যাত্রীরা।
কথা
হয় সোহাগ পরিবহনের টিকিটে বিক্রেতা নয়নের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম টিকিট
বিক্রির প্রথম দিনই আমি একাই কাউন্টারে বসে ফোনে কয়েক বাসের টিকিট বিক্রি
শেষ করে ফেলেছি। পাশাপাশি অনলাইনে তো বিক্রি হচ্ছেই। এখন আর কোনও কাজ নেই
ঈদের আগ পর্যন্ত।
এদিকে দক্ষিণ বাংলা পরিবহনের চেয়ারম্যান সোহাগ মৃধা
বলেন, আমাদের বাঁধাধরা যাত্রী কম। ঈদের আগে যারা ছুটি পান তারা আসেন, নগদে
টিকিট কিনে নগদে চলে যান। আমার অগ্রিম টিকিট বিক্রি কম।
ঈদযাত্রায়
অগ্রিম টিকিটে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ নেই। তবে বাসের কর্মচারীরা জানান,
সারা বছর বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার ওপর যে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়, ঈদের সময়
সেটা দেওয়া হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে অনেক
যাত্রী প্রশ্ন তুললেও মেনে নিচ্ছেন।
গত ১৯ মার্চ এক মতবিনিময় সভায়
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এবারের
ঈদযাত্রায় আন্তজেলা বা দূরপাল্লায় যদি কোনও পরিবহন বাড়তি ভাড়া নেয়, এবং
সেটার প্রমাণ যদি আমরা পাই, তবে সেই পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
একইসঙ্গে নেওয়া হবে আইনানুগ পদক্ষেপ।
এবার গাবতলী বাস কাউন্টারের
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে বুথ বসানো হয়েছে ভাড়া তদারকি
করার জন্য। বুথের ফিল্ড সুপারভাইজার বাবুল হোসেন বলেন, অন্য সময় যাত্রী
পেতে বাস মালিকরা ভাড়ায় ছাড় দেন। কিন্তু ঈদের সময় তারা এটি দেন না। কারণ
ঈদে সবাই লাভের মুখ দেখতে চায়।
মধ্যবর্তী স্থানের যাত্রীদের থেকে একই
ভাড়া আদায়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, একই রুটে মাঝপথের যাত্রী নেওয়ার
কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। নিলে বাসের রুট অনুযায়ী তাদের সর্বশেষ দূরত্বের ভাড়া
দিতে হবে।