পরিবেশ, পাহাড়, নদী ও কৃষিজমি রক্ষায়
দেশে অনেক আইন রয়েছে। ইটভাটা পরিচালনার ব্যাপারেও রয়েছে অনেক আইন, কিন্তু
সেসব আইনের কেউ তোয়াক্কা করে বলে মনে হয় না। আইন প্রয়োগের দায়িত্বে যাঁরা
আছেন, তাঁদেরও রয়েছে উদাসীনতা। ফলে পাহাড় কেটে সমতল করে দেওয়া হচ্ছে।
সারা
দেশেই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা চলছে। কোনো এক জায়গায়
অনেক গভীর করে বালু তোলার ফলে নদীভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ভেকু নামে পরিচিত
খননযন্ত্র দিয়ে কৃষিজমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়
কৃষকরা প্রতিবাদও করতে পারেন না।
আর এসব মাটির বেশির ভাগই যায় ইটভাটায়, ইটভাটা আইনে যা যাওয়ার কথা নয়।
প্রতিনিয়ত
গণমাধ্যমে এমন অনেক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও কখনো কখনো ভ্রাম্যমাণ
আদালতের দু-একটি অভিযান পরিচালিত হলেও তাতে অবস্থার তেমন কোনো হেরফের হয়
না। অভিযানের পরপরই শুরু হয় নতুন করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন।
আবার
যাঁদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তাঁদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও আছে। গত
কয়েক দিনে পত্রিকান্তরে এ রকম বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকায় দেখা
যায়, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ফসলি জমির পাশাপাশি সরকারের মালিকানাধীন জমি
থেকেও মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি চোর (বা ডাকাতরা) এতই
প্রভাবশালী যে স্থানীয় কৃষকরা তাদের বাধা দিতেও ভয় পান। সোমবার উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের
তেঘরিয়া ইউনিয়নের কুমলিরচক মৌজায়।
এ সময় তিনটি ট্রাক ও একটি শ্যালো
মেশিন জব্দ করা হয় এবং মাটি চুরিতে সহযোগিতা করায় তিনজনকে আটক করা হয়।
গতকাল অপর এক খবরে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হাওড়া নদীর পার থেকে
অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর পারে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে
ঝুঁকিতে পড়েছে আশপাশের বাসিন্দাদের বাড়িঘর। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে
ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মাটি চোর বা ডাকাতরা কতটা দুর্র্ধষ অতীতে তার অনেক
প্রমাণ তারা রেখেছে। গতকালের অপর এক খবরে বলা হয়েছে, গত শনিবার কক্সবাজারের
উখিয়া উপজেলার হরিণমারায় পাহাড় কাটায় বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক
বন কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আমরা
মনে করি, পাহাড়, নদী ও কৃষিজমি রক্ষায় সরকারকে কঠোর হতে হবে। শুধু কয়েকজন
শ্রমিক নয়, এসবের পেছনে থাকা প্রভাবশালীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।