চেন্নাই সুপার কিংস ও মোস্তাফিজুর রহমানের চাওয়াতে আইপিএলে তার অনাপত্তিপত্র একদিন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ৩০ এপ্রিলের পরিবর্তে পহেলা মে চেন্নাইয়ের জার্সিতে আরেকটি ম্যাচ বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশের তারকা পেসার।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ থাকায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনছে বোর্ড। তবে তাকে ফেরানো মানে যে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলানো হবে তা নয়। ওয়ার্কলোড কমানো, শতভাগ ফিট ও সতেজ রাখার পরিকল্পনায় মোস্তাফিজকে ফেরানো হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতা থেকে। যেখানে এবার দুর্দান্ত ফর্মে আছেন মোস্তাফিজ। ৫ ইনিংসে ১৮.৩০ গড়ে একমাত্র বিদেশি হিসেবে পেয়েছেন ১০ উইকেট।
আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে মোস্তাফিজকে নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, ‘মোস্তাফিজকে আমরা ১ তারিখ পর্যন্ত খেলতে দিয়েছি। ২ তারিখে সে চলে আসবে। ৩ তারিখে সে অ্যাভেইলেভল। তাকে ব্যাক করানোর কারণ কিন্তু শুধু জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলানোর জন্য না। তাকে ওয়ার্কলোড দিয়ে আমরা খেলাব। এখানে আনলে তাকে পরিকল্পনা দেব।‘
জালাল ইউনুস সামনে আনলেন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঘটনা। যেখানে মোস্তাফিজ ও সাকিব টানা আইপিএলের ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন। সাকিব সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ওমান গিয়েছিলেন সারারাত গাড়িতে ট্রাভেল করে টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগে। মোস্তাফিজ আগে পৌঁছেছিলেন বিমানে করে। বিশ্বকাপ চলাকালীন তাদের ক্লান্তির বিষয়টি সামনে আসলে দল থেকে তাদের আড়াল করা হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পর বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্যই হলেন তিনি।
‘জাতীয় দলের স্বার্থ প্রথমে। আপনারা জানেন, ২০২১ সালে দুজন খেলোয়াড় আইপিএল খেলে কিন্তু বিশ্বকাপে জয়েন করেছিল। ওখানে তারা ক্লান্ত ছিল। তারাও বলেছে তারা ক্লান্ত। আমরা ওরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই না।’
‘মোস্তাফিজকে দেশে ফিরিয়ে আনা মানেই যে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলাব তা না। তাকে আমরা ওয়ার্কলোড দেব, প্রেসার কমাব। দলের সঙ্গে থাকবে। আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকবে। একটা বিশ্বকাপ, একটা বড় ইভেন্টে যাচ্ছে। ইভেন্টে গিয়ে যেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে পারে। তাকে পুরোপুরি ফিট থাকতে হবে। ক্লান্ত হয়ে গেলে তো সে ডিলিভারি করতে পারবে না। আমাদের কি দরকার? আমাদের দরকার ফ্রেশ মোস্তাফিজ। ক্লান্ত মোস্তাফিজকে চাই না।’ - যোগ করেন তিনি।
বোর্ডের এমন ভাবনায় উঠে এসেছে জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলানোর চেয়ে আইপিএলে থাকলে মোস্তাফিজের জন্য ভালো হতো কি না। এর উত্তরে জালাল ইউনুস বর্তমান বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে আসলেন, ‘মোস্তাফিজের এখন আইপিএলে খেলে শেখার কিছু নেই। লার্নিং প্রসেস ইজ ওভার। বরং মোস্তাফিজের থেকে শিখতে পারে আইপিএলের অনেক খেলোয়াড়। এতে বাংলাদেশের কোনো বেনিফিট হবে না। মোস্তাফিজকে পেয়ে অন্যদের বেনিফিট হবে।’
সঙ্গে যোগ করেন, ‘আইপিএল খেলাটা আপনাদের কাছে মনে হয় ৪ ওভারের খেলা। কিন্তু কত ধকল নিতে হয় আপনারা হয়তো জানেন না। রাতের বেলা কিন্তু তাদের ট্রাভেল করতে হয়। খেলা শেষে রাতের বেলা ১টায় বিমানবন্দরে গিয়ে ঘুমিয়ে তাদের ট্রাভেল করতে হয়। এটায় অনেক কষ্ট। আমাদের কনসার্ন হচ্ছে মোস্তাফিজের হেলথ। তার ফিটনেস। তারা চাইবে ওর থেকে ১০০ ভাগ নেওয়ার জন্য। তার ফিটনেসের দিকে কিন্তু ওদের (ফ্র্যাঞ্চাইজির) কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের আছে। তার আইপিএলে আর শেখার কিছু নেই। সাত-আট বছর ধরে আইপিএল খেলছে। এখন খেললে বেনিফিটেট তারা হবে আমরা হবো না।’
মোস্তাফিজকে নিয়ে বোর্ডের যে নীতি, যে সচেতনতা তা অনেকটাই সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে তাসকিন এবং শরিফুলের ইস্যুতে। দেশে থাকা এই দুই পেসার টানা ম্যাচ খেলে যাচ্ছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর জার্সিতে। সেটাও পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ। দেশের চরম গরমের মধ্যেও তাদের টানা ম্যাচ খেলার ঝুঁকি তো আছেই। সামনে যখন ক্যাম্প হবে তখনও তাদের খাটতে হবে।
তাসকিনের এর আগে আইপিএল খেলার প্রস্তাব ছিল। বিসিবি অনুমতি দেয়নি। এবারও নিলামে নাম তুলতে দেয়নি। শুধু তাসকিন নয়, শরিফুলের বেলায়ও তা হয়েছে। বাড়তি সচেতনতার জন্য তাদেরকে আইপিএলের জন্য ছাড়েনি বিসিবি। সেখানে দেশে তপ্ত গরমে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট টানা খেলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘তাসকিন কিন্তু লংগার ভার্সনে না খেলে দুটা ভার্সনে খেলছে। এখানে তো ওয়ার্কলোড কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা আছে, তাসকিন যদি কোনো ধরণের সমস্যা অনুভব করে তাহলে যেন সাথে সাথে রিপোর্ট করে। এখন পর্যন্ত সে কোনো কমপ্লেইন করছে না। বরঞ্চ সে বলছে, হি ইজ ফিলিং বেটার। ক্রিকেট বোর্ড থেকে বলা আছে সবগুলো দলকে বিশেষ করে পেসারদের কোনো ধরণের আনইজি ফিল করলে যেন সাথে সাথে বোর্ডকে জানানো হয়। তখন তাদেরকে উইড্রো করা হবে।’
বিসিবি যখন বিশ্বকাপের আগে নিজের খেলোয়াড়দের নিয়ে এতো ভাবছে তখন উল্টোপথে নিউ জিল্যান্ড। পাকিস্তান সফরে তারা যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি দলের নিয়মিত ৯ ক্রিকেটারকে ছাড়া। যারা আইপিএলে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলছেন। নিউ জিল্যান্ড বোর্ড কি চিন্তা করছে আর বিসিবি কি চিন্তা করছে এমন প্রশ্নও করা হয়েছিল জালাল ইউনুসকে। উত্তরে বোর্ডের নিজস্ব সিদ্ধান্তকেই সামনে আনলেন তিনি।
‘তাসকিন যদি ফিট থাকতো (নিলামের সময়) তাসকিনকে আমরা খেলার অনুমতি দিতাম। যেমন একটা লেভেল পর্যন্ত। যেমন মোস্তাফিজকে তো দিয়েছি। দেইনি এটা তো ঠিক না।’
‘আর আপনারা বারে বারে কেন বলছেন আইপিএলে তাদের খেলা উচিত। ওদের (নিউ জিল্যান্ডের খেলোয়াড়) ফিটনেসে তো সমস্যা নেই। তাদের হয়তো ধারা অন্যরকম। আমাদের সমস্যা আছে তো। আমাদের খেলোয়াড়দের লিমিটেশন আছে। তাদের লিমিটেশনে লুক আফটার করতে হবে। আমরা তাদের ওয়ার্কলোড ওভাবে দিতে পারি সেভাবে চিন্তা করে তো পাঠাতে হবে। নিউ জিল্যান্ড দিয়েছে বলে আমাদেরকেও দিতে হবে এটা কি মেনডোটরি কি না। তাহলে? আমাদের নিজেদের লুক আফটার করতে হবে খেলোয়াড়দের।’