স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ঢাকা শহরে গরম বেশি হওয়ার কারণ কী? ঢাকা শহরে
গাছপালা কিছুই নেই, সব কেটে ফেলা হয়েছে। এগুলোর দিকে নজর দেওয়া গেলে গরমের
তীব্রতার থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
রবিবার (৫ মে) রাজধানীর
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘তীব্র তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায়
জাতীয় নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রকাশনা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে
তিনি এ সব কথা বলেন। অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উচ্চ
তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে এই গাইডলাইন প্রস্তুত করা
হয়েছে। এতে সহায়তা করছে ইউনিসেফ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জলবায়ু
পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে
এই উদ্যোগ শিশুদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ২০২১
সালে চালু হওয়া ইউনিসেফের ‘সুস্থ শিশুর জন্য সুস্থ পরিবেশ’ শীর্ষক বৈশ্বিক
কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেসের
(ডিজিএইচএস) তৈরি এ জাতীয় নীতিমালা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে
অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু
পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ
তাপমাত্রা বেড়েছিল তাতে জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাপপ্রবাহ যখন চরম
পর্যায়ে পৌঁছেছে তখনই আমরা এই নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। এটি
সময়োপযোগী একটি নির্দেশিকা, যা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের এই
নীতিমালার আলোকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই গরমে
মানুষকে কীভাবে সুস্থ রাখতে পারি, ভালো রাখতে পারি, সেটা স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এই গাইডলাইন প্রস্তুতে সহায়তা দেওয়ার জন্য আমি
ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানাই।’
ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাপমাত্রা
প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি পাঁচ শতাংশ
বাড়ে এবং তাপপ্রবাহ না থাকা সময়ের তুলনায় তাপপ্রবাহের সময়ে এই হার ১৬ শতাংশ
পর্যন্ত বাড়তে পারে। বাংলাদেশে অপরিণত শিশু জন্মের হার বিশ্বের মধ্যে
সবচেয়ে বেশি (১৬ দশমকি ২ শতাংশ) এবং তাপপ্রবাহে এটি আরও বাড়ে।
এই
নির্দেশাবলীর লক্ষ্য হলো, জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো এবং গরমজনিত
স্বাস্থ্য উদ্যোগে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। বৃহত্তর
কমিউনিটি ও জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন
মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনের মাধ্যমে এই নীতামালা
সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।
ইউনিসেফের হিসেবে, ২০৫০ সাল নাগাদ
বাংলাদেশের মোট শিশুর ৯৯ শতাংশ বা ৩ কোটি ৫৫ লাখ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের
সম্মুখীন হবে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। ২০২০
সালে ২৬ লাখ শিশু (দেশের মোট শিশুর পাঁচ শতাংশ) এ ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন
হয়েছিল।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতি তিন শিশুর একজন বা
প্রায় ২ কোটি শিশু প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
চলমান তাপপ্রবাহ, বন্যা, নদী ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু
পরিবর্তনজনিত পরিবেশগত অভিঘাতের মতো বিরূপ আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতির শিকার
হচ্ছে শিশুরা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের
ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত মানুষের জন্য অনেক
স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। ইউনিসেফ জলবায়ু-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ
মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রতিটি শিশুর জন্য
একটি সহনশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ডিজিএইচএস, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং
অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা রাখে।
তাপপ্রবাহের
মাত্রার ওপর ভিত্তি করে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা, বয়স্ক ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ
জনগোষ্ঠীর কী কী ধরনের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে, সেসব অসুস্থতা এবং
তা প্রতিরোধের পরিকল্পনা রয়েছে ন্যাশনাল গাইডলাইন অন হিট রিলেটেড ইলনেসে।
তীব্র তাপপ্রবাহের সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কীভাবে সেবা
দেওয়া হবে, তার দিকনির্দেশনাও রয়েছে।
হজের সময় তীব্র গরমের হাত থেকে
রক্ষা পেতে ও অসুস্থ রোগীকে সহযোগিতায় করণীয় সম্পর্কে এই গাইডলাইনে
নির্দেশনা রয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয়ও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী ও খুলনা
বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের যেসব জেলার মানুষ তীব্র গরমের কারণে ঝুঁকিতে
বসবাস করছেন, সেসব জেলায় স্বাস্থ্য-কৃষি-শিক্ষা বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন
দফতর ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কীভাবে সচেতনতা তৈরিসহ নানা কাজে ব্যবহার
করা যায়, সেগুলো গাইডলাইনে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাস্থ্য
অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমমের
সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও ছিলেন– স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো.
জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.
মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ এমা
ব্রিগহাম প্রমুখ।