দেশের চাল ব্যবসায় নানা ধরনের চালবাজি রয়েছে। ইরি ও
উফশী জাতের বিভিন্ন ধানের চালকে কেটেছেঁটে বা পলিশ করে অন্য ধরনের চাল বলে
বেশি দামে বিক্রি করা হয়। মিনিকেট নামে কোনো ধান না থাকলেও বাজারে মিনিকেট
চালের ছড়াছড়ি। বলা হয়ে থাকে, সরু বা মিহি করে কাটা হয় বলেই এই চালের নাম
হয়েছে মিনিকেট (মিনি+কাট, পরবর্তীকালে মিনিকেট)।
এর ফলে কেবল ক্রেতারা
প্রতারিত হচ্ছে তা-ই নয়, লাখ লাখ টন চালও নষ্ট হচ্ছে। এতে চালের পুষ্টিগুণও
কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, আগামী
তিন মাসের মধ্যে ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ ও বিক্রয়মূল্য লেখা চালের
বস্তা বাজারে আসবে। আর আগামী ছয় মাসের মধ্যে চাল ছাঁটাই করা বন্ধ করা হবে।
এর পরও কেউ যদি চাল ছাঁটাই করে চিকন করে, তবে তাদের মেশিন জব্দ করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রীর
ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানালেও খুব বেশি আশ্বস্ত হতে পারছি না। কারণ মন্ত্রী
এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ধানের বস্তায়
বাধ্যতামূলকভাবে ধানের জাত লেখা থাকতে হবে। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি
পরিপত্রও জারি করা হয়।
এতে বলা হয়েছিল, ১৪ এপ্রিলের পর বাজারে থাকা সব
চালের বস্তায় ধানের জাত, মিল গেটে মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, ওজন, উৎপাদনকারী
প্রতিষ্ঠানের নাম, উপজেলা ও জেলার নাম লেখা থাকতে হবে। সেই তারিখ পেরিয়ে
গেছে। এখন মন্ত্রী বলছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে। তিন মাস পর হয়তো আরো তিন
বা ছয় মাসের কথা বলা হবে। গত বুধবার ‘খাদ্যবাহিত রোগ ও স্বাস্থ্য বিপত্তি
নিরসনে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে মন্ত্রী আরো
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, চাল চকচকে করতে গিয়ে পলিশ
করার কারণে (বছরে) ১৬ থেকে ২০ লাখ টন চাল নষ্ট হয়ে যায়। এটি একটি জাতীয়
ক্ষতি এবং আমাদের এই ক্ষতি বন্ধ করতেই হবে। অবশ্য এর আগে গত ২৮ এপ্রিল
পুষ্টিভাত কনভেনশনে বলা হয়েছিল, পলিশ করার কারণে বছরে ৬০ লাখ টন চাল নষ্ট
হয়। সেখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছিল। ভাতের মাড় ফেলে
দেওয়ার কারণে ভাতের পুষ্টি চলে যায় এবং এর ফলেও বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ বা ৬০
লাখ টন চাল নষ্ট হয়।
খাদ্যের অপচয় বন্ধ করার পাশাপাশি খাদ্যের পুষ্টিমান
নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। উৎপাদন ও বিক্রয়
পর্যায়ে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি ভোক্তাদের সচেতন করতেও নানা কর্মসূচি
নিতে হবে।