এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশের
উন্নয়ন অভিযাত্রায় বড় প্রতিবন্ধক মূল্যস্ফীতি। দেশে মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড়
চাপ খাদ্যে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০.২২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা
প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্প্রতি একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে।
ওই জরিপ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। বিবিএসের
তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে গড় মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে কিছুটা কমে
৯.৭৪ শতাংশ হয়েছে। গত মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৮১ শতাংশ। এক মাসের
ব্যবধানে গড় মূল্যস্ফীতি কমেছে ০.৭ শতাংশ।
কিন্তু এপ্রিলে খাদ্য
মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০.২২ শতাংশ। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৯.৮৭ শতাংশ।
আবার গড় মূল্যস্ফীতি শহরে কমলেও গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি
ছিল। এপ্রিল মাসে গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৯২ শতাংশ, যেখানে
শহরাঞ্চলের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪৬ শতাংশ।
বাড়তি এই মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œ আয়ের মানুষ প্রচ- চাপের মধ্যে রয়েছে।
মূল্যস্ফীতির
বিষয়টি নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, তখনই নীতিনির্ধারক মহল থেকে বলা হয়ে থাকে,
আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের বাজারে
মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণ খুঁজতে গিয়ে বিআইডিএস
দেখেছে, গত এক বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। এরপর রয়েছে পোলট্রি
বা খামারের মুরগির দাম। দেশের পোলট্রি খাদ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর।
ফলে অনিবার্যভাবেই মূল্যস্ফীতি ঘটেছে।
আমরা
কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করছি, বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না।
নিত্যপণ্যের দাম যখন-তখন বেড়ে যাচ্ছে। জনসাধারণের জীবনমানে ঊর্ধ্বমুখী
মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই
বেশি পড়ে। কারণ তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাদ্যপণ্য কিনতে। দেশের
অর্থনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন থেকেই সতর্ক করে আসছেন। এ
ক্ষেত্রে সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে বলেছিলেন
তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানি পণ্যে
মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে।
বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেশ দ্রুতগতিতে
কমলেও বাংলাদেশে কমার তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে
ধরতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ
করছে দুই বছর ধরে। কিন্তু তার পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি।
মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণে শুধু সুদহার বাড়ানো বা এ রকম পৃথক পদক্ষেপ নিলে হবে না। এর
সঙ্গে শুল্ক কমানোসহ সমন্বিতভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, মধ্য মেয়াদে মূল্যস্ফীতি কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাজারে পর্যাপ্ত
পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পের
উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহযোগিতা দিতে হবে।