কমরেড হায়দার আকবর খান রনো একজন জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান, বামপন্থী চিন্তাবিদ, তাত্বিক, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রাপ্ত (বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত),বুদ্ধিজীবী,লেখক এবং একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ। তিনি গত ১১মে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। তার এই চির বিদায়ে আমারা ব্যথিত। এই আলোকিত মানুষটিকে নিয়ে "বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট" কুমিল্লা গতকাল এক স্মরণ সভার আয়োজন করেছে যুব ইউনিয়ন কার্যালয়ে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক শেখ আবদুল মান্নান। পরিচালনা করেন যুব ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ রায়হানে এবং রনো ভাই এর জীবনী পাঠ করেন বিপ্লব মজুমদার।
এতে উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন এড. গোলাম ফারুক, বাসদ এর সমন্বয় আবদুল রাজ্জাক, সাংবাদিক মোতাহার হোসেন মাহাবুব, সাবেক সিপিবি নেতা জসীম উদ্দিন আহমেদ, যুব ইউনিয়ন কুমিল্লা জেলার সভাপতি সুশান্ত বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ রায়হান, জোড়া শালিক এর প্রকাশক হালিম আবদুল্লাহ, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক রতন প্রণয়, সভাপতি শ্রমিক ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন এর সভাপতি রুদ্র, সাধারণ সম্পাদক সৌরভ রায়, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ও অজিত গুহ কলেজের প্রিন্সিপাল শরীফ আহমেদ, শিক্ষক নেতা শান্তিভূষণ দেবনাথ, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান, উষসী সংগঠক ইউনুস আহমেদ, লেখক অধ্যাপক রাহুল তারণ পিন্টু, ঐক্য ন্যাপ সহ সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাবেক ছাত্র নেতা একেএম মোর্শেদ কামাল, ট্রেড ইউনিয়ন সভাপতি ও শ্রমিক নেতা কমরেড আনোয়ার, যুব নেতা মেহেদী হাসান, সাংবাদিক শ্যামল ববি, কুমিল্লা কাগজের উপসম্পাদক জহির শান্ত।
বক্তারা হায়দার আকবর খান রনোর জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন-হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক প্রবাদ পুরুষ। তিনি ১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। হায়দার আকবর খান রনো একাধারে মাঠে-ময়দানের সংগ্রামী রাজনৈতিক নেতা, একাত্তরের রণাঙ্গনের সৈনিক, তাত্ত্বিক ও লেখক।
১৯৫৮ মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাস করেন। নটরডাম কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনি সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন তদানীন্তন সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রজীবন শেষে তিনি শ্রমিক আন্দোলনে যোগদান করেন । ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক।
হায়দার আকবর খান রনো চারবার কারাবরণ করেছেন, সাতবার হুলিয়ার কারণে তাকে আত্মগোপনে যেতে হয়েছে।
সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মকা-ের পাশাপাশি তিনি মার্কসবাদ, রাজনীতি, ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি, সাহিত্য ও বিজ্ঞান (পদার্থবিদ্যা) সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন ও অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। ২০২২ সালে তিনি বাংলা একাডেমী কর্তৃক সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২৪ বছর বয়সে তিনি প্রথম যে বইটি লেখেন তার নাম সাম্রাজ্যবাদের রূপরেখা। এই বইটিই ছিল পাকিস্তান আমলে মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্রাজবাদ সংক্রান্ত বিশ্লেষণমূলক প্রথম তাত্ত্বিক গ্রন্থ। তার মোট গ্রন্থের সংখ্যা ২৫। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শতাব্দী পেরিয়ে (২০০৫ সালে বর্ষসেরা বই হিসেবে প্রথম আলোর পুরস্কার লাভ করে)। তার মৃত্যুতে জাতী একজন বিজ্ঞ রাজনীতির পদপ্রদর্শককে হরালো। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়।