গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এখনো বড় বড় শহরের আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অসুখবিসুখে এখনো তাদের প্রধান ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা দিন দিনই যেন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বড় বড় ভবন করা হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই।
নার্স, টেকনিশিয়ানসহ অন্য জনবলেরও একই অবস্থা। রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। যেসব যন্ত্রপাতি আছে সেগুলোরও বেশির ভাগ অচল হয়ে পড়ে থাকে। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সেখানে অতি উচ্চ মূল্যের সেবা নিতে অক্ষম বেশির ভাগ রোগী। রোগীরা অ্যাম্বুল্যান্স সুবিধা পায় না বললেই চলে, কারণ বেশির ভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই অ্যাম্বুল্যান্স বিকল হয়ে পড়ে থাকে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তেমনই দুরবস্থার কথা। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। চিকিৎসা পাওয়ার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মানুষের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালটিতে এক্স-রে, ইসিজির মতো রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক যন্ত্রপাতিও নেই। ২০১৯ সালের শেষ দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়, কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ানো হয়নি জনবল। হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তার (আরএমও) পদটি শূন্য রয়েছে।
জুনিয়র কনসালট্যান্ট চারজনের মধ্যে আছেন দুজন। তিনজন মেডিক্যাল অফিসারের বিপরীতে আছেন মাত্র একজন। শিশু, মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি ও গাইনি বিভাগে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও তাঁরা প্রেষণে অন্য হাসপাতালে কাজ করছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৫ জনের মধ্যে রয়েছেন সাতজন। বাকি ১৮টি পদই শূন্য। স্বাস্থ্য পরিদর্শকের দুটি পদই খালি রয়েছে। আট থেকে ১০ জন আয়া থাকার কথা থাকলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন মাত্র দুজন। অন্যান্য জনবলের অবস্থাও প্রায় একই রকম। অথচ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে চার শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসে।
আমরা আশা করি, জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকসংকট অবিলম্বে দূর করা হবে। একই সঙ্গে অতি প্রয়োজনীয় অন্যান্য লোকবলের অভাবও দূর করতে হবে। পাশাপাশি এক্স-রে মেশিনসহ জরুরি রোগ নির্ণয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হবে। আমরা চাই, জুড়ী উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হোক।