নতুন
বাজেটে অন্তত ২৮২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক
(আরডি) কমানো হচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাজারে। স্বল্পোন্নত দেশ
থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও দেশে উৎপাদনের স্বার্থে বেশ
কিছু পণ্যে শুল্ক কমানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকাল ৩টায় জাতীয়
সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে
পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে
বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর হ্রাস-বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দিয়েছেন তিনি।
প্যাকেটজাত
গুঁড়ো দুধ: দুই ধরনের গুঁড়ো দুধ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক-করের পার্থক্য
অনেক বেশি থাকায় আড়াই কেজি পর্যন্ত প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধের ওপর বিদ্যমান ২০
শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আড়াই
কেজি ওজন পর্যন্ত গুঁড়ো দুধের ওপর করহার ৮৯.৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮.৬০
শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে গুঁড়ো দুধের বাল্ক
আমদানিকারকদের জন্য মোট করহার ৩৭ শতাংশ। এর ফলে বাজারে প্যাকেট গুঁড়ো দুধের
দাম কমতে পারে।
নির্মাণসামগ্রী: আবাসনসহ বিভিন্ন নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত
রড, বার ও অ্যাঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহৃত হয়। বাজেটে
এসব পণ্য আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব
দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে নির্মাণসামগ্রীর দাম কমতে পারে।
কিডনি
ডায়ালাইসিসের ফিল্টার: কিডনি রোগীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে এবারের
বাজেট। ডায়ালাইসিসের প্রধান দুই উপকরণ ফিল্টার ও সার্কিটে থাকা ১০ শতাংশের
আমদানি শুল্ক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ কারণে
ডায়ালাইসিস খরচ কমতে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য: নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার
স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ৩০ প্রয়োজনীয় পণ্য ও
খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে
১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল,
গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা,
আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা,
সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০ পণ্য। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কিছুটা হলেও দাম
কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিদেশি চকোলেট: প্রস্তাবিত বাজেটে চকোলেট
আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব
দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ কারণে বিদেশ থেকে আনা চকোলেটের দাম কমতে পারে।
ল্যাপটপ:
ল্যাপটপ আমদানিতে মোট করভার এখন ৩১ শতাংশ। এতে ল্যাপটপ সাধারণের ক্রয়সীমার
বাইরে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে নকল ল্যাপটপ আমদানি। এ জন্য আমদানি পর্যায়ে
আরোপিত মূসক প্রত্যাহার করে করভার ২০ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব
দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর ফলে বাজারে ল্যাপটপের দাম কমে আসতে পারে।
কারণ
হিসেবে বলা হয়েছে, সরকার আগে স্থানীয় প্রস্তুতকারকদের সুরক্ষা দিতে
ল্যাপটপ আমদানিতে কর বাড়িয়েছিল। তবে এমন পদক্ষেপে শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের
খরচ বেড়েছে। কারণ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ল্যাপটপের মান ও দাম নিয়ে ক্রেতারা
সন্তুষ্ট নন। এছাড়া দেশের বাজারে রিফার্বিশড ও নকল পণ্যের প্রবেশ ঠেকাতে
এবং স্থানীয় ফ্রিল্যান্সার ও সফটওয়্যার ডেভেলপারদের সহায়তা করতে এই
সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সুইচ-সকেট: বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সুইচ-সকেটের দাম
কমতে পারে। কারণ দেশে উৎপাদিত সুইচ-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত
কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে।
ইলেকট্রিক মোটর: ইলেকট্রিক মোটর
উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে
ইলেকট্রিক মোটরের দাম কমতে পারে।
মোটরসাইকেল: দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের সিকেডি ইঞ্জিনের পার্টস আমদানির শুল্ক কমছে। এ কারণে দেশে তৈরি মোটরসাইকেলের দাম কমতে পারে।
কার্পেট:
কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রেপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০
শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দেশে তৈরি কার্পেটের দাম কমতে
পারে।
ডেঙ্গু কিট: ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কিট আমদানিতে রেয়াতি
সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও ডেঙ্গু রোগীদের এনএস-১
অ্যান্টিজেন পরীক্ষার খরচ সরকারি হাসপাতালের জন্য ১০০ টাকা এবং বেসরকারি
হাসপাতালের জন্য ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিতে
রেয়াত সুবিধা দেওয়া হবে।
ক্যানসার চিকিৎসা খরচ: ক্যানসার রোগীদের
চিকিৎসা সুলভ করতে চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি
সুবিধার আওতায় নতুন কিছু কাঁচামাল যোগ হচ্ছে। ফলে আশা করা যাচ্ছে
ক্যানসারের চিকিৎসা খরচ কমে আসবে।
এছাড়া ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও
স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি
সুবিধা আগামী অর্থবছরে অব্যাহত থাকছে।
কৃষিযন্ত্র: কৃষিকাজের যন্ত্রের দাম কমতে পারে। কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রাখা হবে।
উড়োজাহাজ
রক্ষণাবেক্ষণ খরচ: এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন ও প্রপেলার আমদানি পর্যায়ে কমতে
পারে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক। ফলে উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে কমতে পারে খরচ।