কুমিল্লার
চান্দিনায় ডেকে নিয়ে যুবলীগ নেতা তানভীর আহমেদ হত্যার ঘটনায় নিহতের মা
নিলুফা ইয়াসমিন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে ১৪ জনের নাম
উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২জনকে আসামী করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার
সন্দেহে জিজ্ঞাসা বাদের জন্য থানায় আনা সেলিম মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে
আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) মামলার
এজাহার ভূক্ত এক নম্বর আসামী সেলিম মিয়াকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো
হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় খুনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দেয় আসামী সেলিম।
জবানবন্ধীতে সেলিম তার স্ত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনেন তানভীরের
বিরুদ্ধে। তারপরও হত্যাকান্ডের রহস্যের জট খুলছে না বলে মনে করেন পুলিশ।
আসামী সেলিমের রহস্যে ঘেড়া জবানবন্ধীর জট খুলতে মামলাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে
তদন্ত কাজে ব্যস্ত থানা পুলিশ।
এর আগে ৫ জুন নিহতের মা নিলুফা ইয়াসমিন
এর দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহার ভূক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে জমি
সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধের জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ৪ জুন
রাত সাড়ে ৯টায় সেলিম মিয়া নামের ওই ব্যক্তি তানভীরকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে।
পরদিন ভোরে মানুষের মুখে শুনতে পায় পাশ্ববর্তী গ্রামের সেলিম মিয়ার ঘরের
পাশে তানভীরের মরদেহ পরে আছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে রক্তাক্ত
অবস্থায় তানভীরের নিথর দেহ দেখতে পায় পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, তানভীর
হত্যাকান্ডের পর থেকে এখন পর্যন্ত একই বক্তব্য দিয়ে আসছেন গ্রেফতার হওয়া
আসামী সেলিম মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া আক্তার। তার বক্তব্যে ৪ জুন দিনগত রাত
২টায় তানভীর নিজ গ্রাম গণিপুর থেকে গড়ামারা গ্রামে এসে সেলিম এর ঘরে ঢুকে
তার স্ত্রী রাবেয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করায় সেলিম মিয়া তানভীরকে পিটিয়ে হত্যা
করে। সেই ঘটনাই রহস্যে ঘেড়া বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ।
নাম
প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, যে স্থানে তানভীরকে
হত্যা করা হয়েছে সেই স্থানটি অনেক ঘনবসতিপূর্ণ। সেখানে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি
টিনের বসত ঘর। গভীর রাতে যদি দুই পক্ষের ডাক-চিৎকার ও মারধরের ঘটনা ঘটতো
আশপাশের লোকজন নিশ্চয়ই টের পেতো। গ্রেফতার হওয়া সেলিম এর স্ত্রী রাবেয়া
বেগম যে অভিযোগ করছেন রাত ২টায় তানভীর তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণ চেষ্টা করেছে,
তাহলে কি রাবেয়া বেগম এর ঘরের দরজা খোলা ছিল? পয়ত্রিশোর্ধ্ব ৮ মাসের
অন্তঃসত্ত্বা নারীকে কেনই বা ধর্ষণের চেষ্টা করবে তানভীর! রাবেয়া তার
বক্তব্যে একবার বলছেন তানভীর যখন ঘরে ঢুকে তখন তার স্বামী সেলিম ঘরে ছিল
না, ক্ষনিক পরে আবার বলছেন ঘরেই ছিল! ঘটনার পর মরদেহ সেলিম এর ঘরের পাশেই
ফেলে রেখে সকালে সকলের সামনে নিজের স্বামীর উপর দোষ চাপিয়ে কেনই বা হত্যার
দায় অকপটে স্বীকার করছেন এমন নানা প্রশ্ন জেগেছে সবার মনে। এসব নানা
প্রশ্নে হত্যা কান্ডের ঘটনায় এখনও ধু¤্রুজাল বিরাজ করছে।
চান্দিনা
থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আহাম্মদ সঞ্জুর মোরশেদ জানান, সেলিম হত্যার
দায় স্বীকার করলেও ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
তদন্তের স্বার্থে সব কিছু এখনও বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা
যাবে।