রাজধানীর
গুলশান-বারিধারা কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্ব
পালনকালে পুলিশের কনস্টেবল মনিরুলকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার
কনস্টেবল কাউসার আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজত পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. শাকিল আহাম্মদ রোববার শুনানি শেষে আসামিকে রিমান্ডে
পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মো. আব্দুল মান্নাফ এদিন আসামিকে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
অভিযোগে
বলা হয়, মনিরুল হক (২৭) শনিবার রাত ৯টা থেকে কনস্টেবল কাউসার আলীর সঙ্গে
ফিলিস্তিন দূতাবাসের পুলিশ বক্সে সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্বরত ছিলেন। রাত
পৌনে ১২ টার দিকে কাউসার আলীর সঙ্গে ‘ডিউটি করা নিয়ে’ মনিরুলের বাগবিত-া
হয়। এক পর্যায়ে কাউসার আলী উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে
থাকে। মনিরুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই দূতাবাসের পুলিশ বক্সের সামনে উপুর হয়ে
পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ওই ঘটনায় নিহতের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলাতেই কাউসারকে রিমান্ডে পেল পুলিশ।
পুলিশের
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। মাথার
বাঁ পশে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। বাঁ চোখ, বাম হাতের বাহু, ডান হাতের কনুই,
গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত- বুকে, পেটে, পিঠে বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত
রয়েছে।
গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাউসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল।
"প্রতিটা
ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর
আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন
থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।”
এ ঘটনায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা
হয়েছে, সেটি ব্রাজিলীয় কোম্পানি টরাস আর্মসের তৈরি। প্রায় ১২ বছর আগে টরাস
এসএমটি পুলিশের হাতে আসে। সাধারণ দায়িত্বে এ ধরনের অস্ত্র পুলিশের হাতে
দেখা না গেলেও কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশকে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয়
অস্ত্রও দেওয়া হয়।
ওসি জানান, নিহত মনিরুলের কাছে চায়নিজ রাইফেল ছিল।
সেটা ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ, পাল্টা গুলি করার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি
বা সুযোগই পাননি।
ভিডিওতে যা দেখা যায়:
পুরো ঘটনাটি রাস্তার অন্যপাশে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেই ভিডিও ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতেও গেছে।
সেই
ভিডিওতে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম অস্ত্র নিয়ে গার্ড রুমের লাগোয়া ফুটপাতে
দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর কাউসার গার্ড রুমের ভেতর থেকে বাইরে আসেন।
মনিরুল
এ সময় কাউসারের কাছে আসেন এবং একটু দূরত্ব রেখে তার সঙ্গে কথা বলতে থাকেন।
এরপর কাউসার ভেতরে ঢুকে যান এবং মনিরুল ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে
থাকেন।
এক সময় গার্ডরুমের থাই গ্লাস সরিয়ে কাউসারের সঙ্গে মনিরুলের
আবার কথা হয়। এ সময় তাকে হাত নাড়াতে দেখা যায়। পরে তিনি গার্ডরুমের আরো
কাছে আসেন এবং কয়েক সেকেন্ড পর ভেতর থেকে কাউসারের অস্ত্র গর্জে উঠে।
সঙ্গে
সঙ্গে মনিরুল ফুটপাথ থেকে রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা
করেন। কিন্তু সময় না দিয়ে কাউসার বাইরে এসে তার শরীর লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি
গুলি চালান। এরপরেই মনিরুলের দেহ নিথর হয়ে যায়।
মৃত্যু নিশ্চিত হলে কাউসার এগিয়ে এসে মনিরুলের চায়নিজ রাইফেলটি নিয়ে ফুটপাথে উঠে পাশের দেয়ালে আঘাত করেন।
কিছুক্ষণ
ওই অস্ত্রটি ফুটপাথে রেখে নিজের অস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করে ঘাড়ে নেন
কাউসার। পরে ফুটপাতে দাঁড়িয়েই কাছাকাছি এসে লাশের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে
থাকেন।
ওসি মাজহারুল জানান, ওই সময় ওই পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন
জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেন। তিনি মরদেহ দেখে এগিয়ে যান। তখন
কাউসার তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন।
আহত হয়ে সাজ্জাদ বেশ কিছুদূর গিয়ে পুলিশের একটি গাড়ির সামনে পড়ে যান। পরে তাকে পুলিশই ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়।