হাটের ভিড়, পশু পরিবহনের খরচ আর
শহরের বাড়িতে কোরবানির গরু-ছাগল রাখার ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে বাজারের চেয়ে
বেশি খামারমুখী হচ্ছেন ক্রেতারা। তাই পশুর হাট বসার আগেই খামারে গিয়ে পছন্দ
করে গরু-ছাগল কিনে নিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। যাদের বাড়িতে পশু রাখা নিয়ে
অসুবিধা, ঈদের দিন ভোরে খামারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশু পাবেন
এমন পাবার নিশ্চয়তায় খামারেই রেখে আসছেন অনেকেই। দামে কিছুটা বেশি হলেও
পরিবারের নারী পুরুষ সকল সদস্য মিলে পছন্দ করে গরু-ছাগল কিনে আনন্দিত
ক্রেতারা। গরু ছাগলের বাহারি নাম দেখেও আকর্ষিত হচ্ছেন অনেকে।
কুমিল্লা
শহরের একাধিক স্থায়ী ও মৌসুমী গরুর খামার ঘুরে দেখা গেছে, সারাদিনই
ক্রেতাদের ভিড় থাকে খামারে। শহরের বাড়িতে যারা কোরবানি দেবেন তারাই বেশি
খামার থেকে সংগ্রহ করছেন গরু ও ছাগল। অনেকেই মা-ছেলে, স্বামী-স্ত্রী,
দাদা-দাদীকেও নিয়ে আসছেন কোরবানির গরু-ছাগল পছন্দ করতে। কেউ কেউ ওজন করে
গরু বিক্রি করলেও বেশির ভাগ খামারিই সনাতন পদ্ধতিকে
পছন্দ অনুযায়ী দাম
হাঁকছেন। দরাদরি করে পছন্দ মত গরু বা ছাগল কেউ হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন
বাড়িতে। যাদের বাড়িতে গরু ছাগল রাখার জায়গা নেই- তারা ঈদের দিন ভোরে নিয়ে
যাবার আশ্বাসে খামারেই রেখে যাচ্ছেন গরু ছাগল। কোন কোন খামারি নিজস্ব
পরিবহনে ঈদের দিন গরু পৌঁছে দেবার আশ্বাস দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন
ক্রেতাদের।
কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি এলাকায় নূর জাহান এগ্রো ফার্মে
গিয়ে কথা হয় ক্রেতা শহিদুল ইসলাম সুমনের সাথে। তিনি ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী
সবাইকে নিয়ে এসেছেন পছন্দ করে গরু কিনতে। খামারে গিয়ে বাজেট মত গরু পছন্দ
করার সময় জানান, গরুর হাটের ভিড় আর গরু আনার ঝামেলা এড়াতেই খামার থেকে গরু
কিনছি। এছাড়া বাসার সবাই পছন্দ করে কেনার মধ্যে একটা আনন্দও আছে।
একই
খামারে কথা হয় ক্রেতা রাজিউল আহমেদের সাথে। তিনি জানান, বাসায় গরু রাখার
ঝামেলা তাই গরু কিনে রেখে দিয়েছি খামারেই। ঈদের দিন ভোর বেলা নিয়ে যাবো।
নূরজাহান
এগ্রোফার্মের সত্ত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম জানান, আমি আমার খামারে
স্বাস্থ্য সম্মতভাবে ৫৩টি গরু পালন করেছি। স¤্রাট, যুবরাজ, সুলতান, পুতুল,
বস্ নামের বিশালাকার সুন্দর গরুগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের আগে
ক্রেতারা নিয়ে যাবেন। তিনি আরো জানান, খামারে ক্রেতারা এসে গরু রোগাক্রান্ত
কিংবা আহত কি না তা ভালোভাবে দেখে নিয়ে যেতে পারেন। আর স্থায়ী খামারে গরু
ছোট বেলা থেকেই প্রকাশ্যে বড় করা হয়- তাই তাদের নিয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকে
না।
এদিকে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়া হাটে গিয়ে দেশি গরু মনে করে
ভারতীয় গরু কিনে ফেলেন অনেকেই। এছাড়া ভিড়ের মধ্যে গিয়ে গরু ছাগল কিনে
অতিরিক্ত পরিবহন খরচ দিতে নিরুৎসাহিতরাই খামারে গিয়ে গরু কিনে থাকেন।
কুমিল্লা
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার জানান, কুমিল্লা জেলায়
চাহিদার চেয়ে বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। ভারত থেকে যেন কুমিল্লার বাজারে গরু
না আসে সেজন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।