যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম টিভি বিতর্কে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হলেন বর্তমান ও সাবেক দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সিএনএন-এর আটলান্টা স্টুডিওতে একে অপরকে তীর্যক ভাষায় ঘায়েল করেন। ট্রাম্প বলেন, বাইডেন মার্কিন ইতিহাসের নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্ট, তার শাসনামল যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
চলতি বছরের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম টিভি বিতর্কে মুখোমুখি জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-এর আয়োজনে এই বিতর্ক ছিল অনেক কারণেই ঐতিহাসিক।
মার্কিন রাজনীতিতে এই প্রথম বর্তমান ও সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট বিতর্কের মঞ্চে। চার বছর পর আবারও মুখোমুখি বাইডেন-ট্রাম্প। বিতর্কে প্রাধান্য পায় অর্থনৈতিক ইস্যু। বাইডেন দাবি করেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। জবাবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বাইডেন মার্কিন নাগরিকদের জন্য কিছুই করেননি।
ট্রাম্প বলেন, আপনার লজ্জা পাওয়া উচিত, আপনি অনেক মানুষের জীবন ধ্বংস করেছেন।
বিতর্কে উত্তেজনা ছড়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। শুরুতে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও পরে ট্রাম্প পুতিনের যুদ্ধ বন্ধের শর্ত গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। আর বাইডেন মনে করেন, পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী। পুতিন পুরোনো সোভিয়েত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই যুদ্ধে নিরীহ ইউক্রেনবাসীর পাশে থাকা।
বিতর্কে উঠে আসে গাজায় ইসরাইলের হামলা প্রসঙ্গ। সঞ্চালকের এক প্রশ্নে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এড়িয়ে যান ট্রাম্প। আর বাইডেন বলেন, একমাত্র হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না। ইসরাইলের প্রতি তার জোরালো সমর্থনও পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন। হামাসকে নির্মূলেরও ঘোষণা দেন। বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য তিনি প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
বাইডেনের অভিবাসন নীতি নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প। বলেন, বাইডেন সীমান্ত খুলে দেয়ায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অপরাধী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। তাদের বিলাসবহুল হোটেলে রাখা হচ্ছে। আর ওই সব অপরাধীরা মার্কিন নাগরিকদের ও নারীদের হত্যা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন অসভ্য দেশ, আর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন বাইডেন।
জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের প্রতিটি কথা মিথ্যা ও বানোয়াট। সাবেক প্রেসিডেন্টের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বাইডেন। তিনি বলেন, রাতে এক পর্নো তারকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেছিলেন, অথচ ঘরে তার স্ত্রী ছিলেন গর্ভবতী। ডদিও ট্রাম্প বিষয়টি আগে
থেকেই অস্বীকার করে আসছেন, উল্টো প্রেসিডেন্ট-পুত্র যে আদালতের রায়ে অপরাধী হয়েছেন পাল্টা সেই প্রসঙ্গ তুলে আনেন।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি। বরং বলেন, ওই দিন যা করার জনগণ করেছে। তিনি রাষ্ট্রীয় শপথ ভঙ্গ করার মতো কোনো কাজ করেননি। বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের সরাসরি নির্দেশে হামলা হয়েছে। ট্রাম্পসহ দায়ী সবার জেলে যাওয়া উচিত।
রিপাবলিকান পার্টি ও ট্রাম্প গর্ভপাতের বিরোধী হলেও বৃহস্পতিবার আইডাহোতে জরুরি প্রয়োজনে গর্ভপাতের সমর্থনে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সমর্থন করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। জলবায়ু ও বৈশ্বিক ইস্যুতে জাতিসংঘে অর্থায়ন বন্ধ করার পক্ষেও মত দেন ট্রাম্প। বিতর্কে ওঠে আসে স্বাস্থ্য, শিশু ও বয়স্ক সেবা, সামাজিক নানা ইস্যু। প্রশ্ন তোলা হয় দুজনের বয়স নিয়েও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিতর্কে ছিলেন খানিকটা দুর্বল আর ট্রাম্প নানা বিষয়ই এড়িয়ে গেছেন। বিতর্কের পর এক জরিপে ট্রাম্প দর্শকদের সমর্থন পেয়েছেন ৬৭ শতাংশ আর বাইডেন পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর। আর চলতি বছর নভেম্বরের ৫ তারিখ হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।