কোটাবিরোধী
আন্দোলনকারীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন অবরোধ করায় রাজধানীর
সঙ্গে সব রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল দুপুরের পর থেকে, এতে দুর্ভোগে পড়েন
দূরযাত্রার যাত্রীরা। মঙ্গলবার ঢাকার বাইরেও গাজীপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী,
ময়মনসিংহ ও রংপুরে রেলপথ অবরোধ করার খবর এসেছে। এ দিন দুপুরের পর ঢাকা থেকে
যেমন কোনো ট্রেন বের হতে পারেনি, তেমনি ঢাকাও প্রবেশ করতে পারেনি।
অবরুদ্ধ থাকার সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর রাত ৮টায় মহাখালী থেকে কমলাপুর ও বিমানবন্দরের উদ্দেশে দুটি ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
এর
আধা ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টায় মহাখালীর রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান জহিরুল ইসলাম
বলেন, ঢাকা থেকে তিনটি ট্রেন ছেড়ে গেছে, প্রবেশেও করেছে তিনটি।
কোটাবিরোধী
আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মত
দেশজুড়ে কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
শিক্ষার্থীরা। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামা ছাত্রলীগ এবং আইনশৃঙ্খলা
রক্ষায় মোতায়েন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে
হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করে
কোটাবিরোধীরা। এটি ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচলের প্রধান রুট। এ সময় ঢাকা থেকে
রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস এবং রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি
এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে পড়ে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মহাখালী রেলক্রসিং
এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কোটাবিরোধীদের সংঘর্ষ চলতে দেখা যায়। সেই থেকে রাত
৮টা পর্যন্ত সেখানে ট্রেন আটকে ছিল।
সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টাররা বলেছেন, রাত ৮টায় মহাখালী থেকে একটি ট্রেন কমলাপুর, আরেকটি বিমানবন্দর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে।
মহাখালীতে
অবরোধে ট্রেন আটকে পড়া যাত্রীদের অনেককে সেখানে নেমে যেতে দেখা যায়। শিশু,
নারী, বয়স্ক যাত্রীদের ট্রেনেই অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
রাজশাহী থেকে
সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে ঢাকায় আসা আবদুর রহমান নামে এক যাত্রী বিকাল ৪টার
দিকে বলেন, “কমলাপুর নেমে আমি খিলগাঁওয়ে যাব। আমি একা হলে হেঁটে চলে যেতে
পারতাম। কিন্তু রাস্তায়ও গাড়ি চলছে না। এ অবস্থায় আমার সঙ্গে যারা আছে,
তাদের নিয়ে যাওয়া কঠিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি কী হয়, না হলে সবাইকে
নিয়ে হেঁটেই যেতে হবে।”
ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে শতশত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। ট্রেন ছাড়া না-ছাড়া নিয়ে তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল।
ঢাকার
কমলাপুর থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে যাবেন রুখসানা সুলতানা। তিনি বলেন,
বেলা ২টা ৫০ মিনিটের সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার কথা ছিল তার।
রাত পৌনে ৭টায়ও স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।
“ট্রেন ধরার জন্য
বেলা দেড়টার দিকে এখানে আসি। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে এসেছে, কিন্তু ছেড়ে
যাচ্ছে না। স্টেশন থেকে একবার বলেছিল ৬টার পর ছেড়ে যাবে, কিন্তু এখনও ছাড়ার
কোনো লক্ষণ নেই।”
রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত যে তিনটি ট্রেন ছেড়ে গেছে, তার মধ্যে রুখসানার ট্রেনটি আছে কিনা, জানা যায়নি।
কমলাপুরের
স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ট্রেন লাইন
ক্লিয়ার না হওয়ায় ট্রেন ছাড়া যাচ্ছে না। আমাদের এখানে ট্রেনের জন্য অনেক
মানুষ অপেক্ষা করছেন। ট্রেন ছাড়া নিয়ে এখনও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
বিমানবন্দর
স্টেশনে ট্রেনের জন্য যাত্রীদের ব্যাপক ভিড়ের তথ্য দিয়ে স্টেশন মাস্টার
মাহমুদুল হাসান সন্ধ্যায় বলেছিলেন, “দুপুরের পর থেকে কোনো ট্রেন আসছে না,
যাচ্ছেও না। এখানে শতশত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন। স্টেশনে পা ফেলার
জায়গা নেই।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
এনে এর প্রতিবাদে গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মিছিল
করেছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
শিক্ষার্থীরা।
বেলা ৩টার দিকে গাজীপুর শহরের শিমুলতলী রোডে তিতাস গ্যাস
অফিসের পাশে ঢাকাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকা পড়ে। সন্ধ্যা ৬টায়ও
সেটি ঢাকার দিকে ছেড়ে আসেনি।
জয়দেবপুর জংশনের মাস্টার মো. হানিফ মিয়া
বলেন, ভারত থেকে ঢাকাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস গাজীপুর শহরের অদূরে তিতাস রেল
ক্রসিংয়ের পাশে আটকা রয়েছে।
“জানতে পেরেছি ট্রেনটি ৩টা ২৭ মিনিটে
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক স্টেশন অতিক্রম করে। সেখান থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে
জয়দেবপুর জাংশন অতিক্রম করতে ১৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার দিকেও
সেই ট্রেন জয়দেবপুর জংশনের অতিক্রম করেনি।”
ট্রেন চলাচল কখন স্বাভাবিক
হতে পারে- এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত হোসেনের কোনো
বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।