‘ছবি তুলে আর কী করবেন।
প্রশাসন চাইলে কি এসব বন্ধ করতে পারত না? আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লাশঘরের সামনে বসেছিলেন
সীমা আকতার। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে হঠাৎ প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। কথা
বলতে বলতে চোখ মুছছিলেন। লাশঘরে তাঁর স্বামী মো. ফারুকের মরদেহ পড়ে আছে।
ফারুক মুরাদপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় গুলিতে
নিহত হন। তাঁর বুকে গুলি লেগেছে।
ফারুক মুরাদপুরে একটা ফার্নিচার
কারখানায় কাজ করেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কারখানা থেকে চা খেতে
বের হলে মুরাদপুর এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় কোটা আন্দোলনকে
কেন্দ্র করে দুই পক্ষে তুমুল মারামারি চলছিল। আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে
নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে
নগরের লালখান বাজারের বাসা থেকে দ্রুত ছুটে আসেন সীমা আকতার। সঙ্গে শ্বশুর
মো. দুলালও আসেন হাসপাতালে। তাঁরা ফারুকের লাশের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
দুলাল বলেন, ‘আমার ছেলে সকালে কাজে গেল। এখন শুনি মারা গেল। আল্লাহ কীভাবে
এমন ঘটনা ঘটল। এখন আমার নাতি–নাতনিদের কি বলব।’
ফারুক ও সীমা আকতারের এক
ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ফাহিম বাগমনিরাম সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম
শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে ফাহিমা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের
কেজি শ্রেণির ছাত্রী। সীমা বলেন, ‘আমার ছেলে–মেয়েরা এখনো জানে না, তাদের
বাবা নেই। কী বলব তাদের, তা জানি না।’
সীমা আরও বলেন, ‘আমাকে সকালে বলে গেল ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা হবে। এখন একেবারেই চলে গেল।’
সন্ধ্যা
ছয়টার দিকে হন্তদন্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন
আবদুল্লাহ আল নোমান। তাঁর ভাই ওয়াসিম আকরামও ওই ঘটনায় মারা যান। তাঁর গায়ে
গুলির চিহ্ন নেই। তবে তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াসিম
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের নেতা। ভাইরে ভাই বলে চিৎকার করতে করতে লাশ ঘরে
ঢুকে পড়েন নোমান। চিৎকার করে ডাকতে থাকেন ওয়াসিম ওয়াসিম বলে।
নোমান বলেন, ‘ওয়াসিম আন্দোলনে গিয়েছিল। ফিরল লাশ হয়ে। কীভাবে মেনে নেব।’
চমেক
হাসপাতালে বিকেল পৌনে চারটা থেকে আহত ব্যক্তিরা আসতে শুরু করেন। এ পর্যন্ত
প্রায় ৫০ জনের বেশি আহত হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জন
গুরুতর আহত বলে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নুরুল আলম জানান। এ
পর্যন্ত তিনজন মারা যান।