গুলশান শুটিং কমপ্লেক্সে কাটিয়েছেন জীবনের অনেক সময়। সেই কমপ্লেক্সে আসলেন শেষ বারের মতো নিথর দেহে। কিংবদন্তী শুটার আতিকুর রহমানের প্রয়াণে শুটিং অঙ্গন শোকাবহ।
কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনে দেশ জুড়ে অস্থিরতা। কমনওয়েলথ গেমসে ২০০২ সালে স্বর্ণজয়ী শুটার আসিফ হোসেন এখন বিকেএসপির কোচ। বিরুপ পরিস্থিতির মধ্যেও বিকেএসপি থেকে অনেক কষ্টে শেষবারের মতো গুরুকে দেখতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, '১৯৯০ সালে আতিক ভাই ও নিনি ভাই কমনওয়েলথে স্বর্ণ জিতেছিলেন। আমার ২০০২ সালে স্বর্ণ জয়ের অনুপ্রেরণা ছিল তারাই। বিশেষ করে আতিক ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক শিখেছি। তাকে এতটাই শ্রদ্ধা করতাম কখনো তার পা স্পর্শ করিনি মাটিতে সালাম করতাম। আজ জীবনে প্রথম ও শেষ বারের মতো পায়ে সালাম করলাম।'
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য জয়ী শুটার শাকিলও পিস্তল মূল ইভেন্ট। পিস্তল ও রাইফেল উভয় ইভেন্টে আতিক অনন্য হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, 'আতিক ভাই আমাদের গুরু ও অনুকরণীয়। যে কোনো সমস্যায় তার কাছে যাওয়া যেত। তার সামান্য পরামর্শে অনেক সমাধানও হয়েছে। সে পিস্তল ও রাইফেল উভয় ক্ষেত্রেই সফল শূ্টার।'
১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমসে নিনির সঙ্গে স্বর্ণ জেতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জও জিতেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে রয়েছে একাধিক স্বর্ণ। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা শুটার হয়েও থাকতেন নীরবে-নিভৃতে। চট্টগ্রামে তরুণদের শুটিং শেখাতেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন শুটিং ক্লাবের শুটার অভিভাবক হারিয়ে বাকরুদ্ধ, 'স্যারকে হারিয়ে আমরা এখন কার কাছে শুটিং শিখব। তিনি একেবারে হাতে কলমে শেখাতেন।'
শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু আতিকের প্রয়াণ অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, 'তিনি বাংলাদেশের শুটিংয়ের অন্যতম আইকন। তার চলে যাওয়া শুটিংয়ের বড় ধাক্কা। তিনি শুটিংয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।' শুটার আতিক বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদ। তাই তার জানাজায় শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু। বিওএ মহাসচিব শাহেদ রেজা আতিকের পরিবারের পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'বিওএ সব সময় ক্রীড়াবিদদের সুখে-দুঃখে থাকে। শুটার আতিকের পরিবারের পাশেও থাকবে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিওএ'তে কর্ণারের নামকরণের বিষয়টি নির্বাহী সভায় আলোচনা করব।'
শুটার আতিক গত এক দশক ধরেই ক্যান্সারে আক্রান্ত। ক্যান্সার নিয়েই জীবনযাপন করছিলেন। কাল আকস্মিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন। আজ সকালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসেন চিকিৎসক দেখাতে। হাসপাতালে কিছুক্ষণ পরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিকেলে শুটিং ফেডারেশনে জানাজার পর মরদেহ চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, শুটিং ফেডারেশন, শুটার পরিবার সহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক সংস্থা-ব্যক্তি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।