পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের স্মরণে রংপুর নগরীর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’ নামকরণ করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইল, বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে এ দাবি জানান। বর্তমানে গুগল ম্যাপে পার্ক মোড়ের জায়গায় শহীদ আবু সাঈদ চত্বর নাম দেখা যাচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ারশেলসহ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে মিছিলের সম্মুখ থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এ কারণে মিছিলের সামনে থেকে তিনি নেতৃত্ব দেন।
এদিকে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’ নামকরণ করার দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেন। ওবায়দুর রহমান নামে একজন বেরোবি, রংপুর-ফেসবুক গ্রুপে লিখেন, ‘এরই মধ্যে গুগল ম্যাপে পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর নাম করা হয়েছে। এখন বাকিটুকু আপনাদের। তাকে সম্মান করে তার নামে এই চত্বরকে ডাকবেন নাকি অন্য নামে!’
আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আজ থেকে রংপুর পার্ক মোড়ের নাম শহীদ আবু সাঈদ চত্বর- সাধারণ শিক্ষার্থী।’ এ রকম হাজারো শিক্ষার্থী এই দাবি তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্টগুলোতে শত শত লাইক, কমেন্ট করেছেন হাজারো ফেসবুক ব্যবহারকারী।
এদিকে বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তারা পার্ক মোড় এলাকার নাম পরিবর্তনের দাবি তুলে ধরে নতুন নাম ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করেন।
প্রসঙ্গত, নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি ছিলেন দারিদ্র্য পরিবারের অসহায় মা-বাবার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তান। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টায় রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আবু সাঈদ। জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় মো. সিয়াম মিয়া। এ সময় মানুষের ঢল নামে। এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছে। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে যায়।