কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুর একটা থেকে টানা সাড়ে ৫ ঘন্টার সংঘর্ষে আহত হয়ে সন্ধ্যা ৭ পর্যন্ত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ৮৮ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে সদর হাসপাতাল থেকে ২২ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। পুলিশের ছড়াগুলি ও টিয়ার ফেলের ধোঁয়ায় আহত হয়ে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল দুইটির কর্তৃপক্ষ। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হাসপাতালে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি কিংবা কোন মৃতদেহ আসেনি বলেও নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ শেখ ফজলের রাব্বি। সন্ধ্যায় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে সংঘর্ষ থেমে গেলে আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরে আসে। পরে কোটবাড়ি বিশ্ব রোড এলাকায় যান চলাচল শুরু হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে দুপুর ১২ টার দিকে কোটবাড়ি বিশ্ব রোড এলাকায় জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। একসময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছড়লে পুলিশ পাল্টা টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্র্যানেড নিক্ষেপ করে ধাওয়া করে আন্দোলনকারীদের। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের একটি এপিসি ভ্যান ও বিজিবির একটি এপিসি ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের আরও একটি ভ্যান। এছাড়াও যাত্রীছউনি ও আশেপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাউনি ভাংচুর করা হয়। আন্দোলন সমন্বয়কারীদের সাকিব দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, টিয়ারসেল, ঢিল ও গুলিবিদ্ধ অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আমাদের উপর পুলিশ নির্মমভাবে আক্রমন করেছে। আন্দোলনকারীদের একজনকে গুলি করা হয়েছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউল ইসলাম জানান, একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বিজিবি ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত ছাত্র, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্য সহ ৫৩ জন আহত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়া ভিক্টোরিয়া কলেজসহ অন্যান্য বিজিবি দুজন সদস্য হলেন শাহীন ও নাহিদ এবং পুলিশের তিনজন সদস্য হলেন, কনস্টেবল সাইফুল, সাব ইন্সপেক্টর মনির, এএসআই আফজাল হোসেন। এদের মধ্যে সাইফুল এর অবস্থা গুরুতর। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র গুরুতর আহত। নিহত কেউ এখনো আসে নি। তবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি দেয়া অনেকেই আবার গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত কুমিল্লা সদর হাসপাতালে মোট ৩৫ জন চিকিৎসা নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. করিম। এর মধ্যে এর মধ্যে ১৩ জন হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে, দুইজনকে উন্নতি চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্যরা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক। ডা. করিম জানান, আহতদের বেশিরভাগই ছররা গুলি লেগে বেশির আন্দোলনকারী আহত হয়েছে। অন্যান্যরা টিয়ারশেল ও লাঠিপেটায় আহত হয়েছে।