প্যারিস
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৬ জুলাই। তবে ফুটবল শুরু হয়ে যাচ্ছে আজই।
খেলা হবে ফ্রান্সের সাতটি শহরে। ৯ ও ১০ আগস্ট ছেলে ও মেয়েদের ফাইনাল দুটি
হবে প্যারিসের পার্ক দে প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে। অলিম্পিকে ছেলেদের স্কোয়াড
অনূর্ধ্ব–২৩ বছর হলেও এর চেয়ে বেশি বয়সী সর্বোচ্চ তিনজন খেলোয়াড় নেওয়া
যায়। মেয়েদের ফুটবলে অবশ্য বয়সসীমা নেই। প্যারিস অলিম্পিক ফুটবলে চোখ রাখতে
হবে, এমন ১০ জন খেলোয়াড়কে বাছাই করেছে বিবিসি স্পোর্ট। কারা সেই ১০ জন?
হুলিয়ান আলভারেজ (আর্জেন্টিনা)
মায়ামিতে
কিছুদিন আগেই কোপা আমেরিকা জিতেছে আর্জেন্টিনা। প্যারিস অলিম্পিকে ছেলেদের
ফুটবলেও সোনার পদক জয়ে ফেবারিট লিওনেল স্কালোনির দল। আর্জেন্টিনার দলে ২৩
বছরের বেশি বয়সী তিন খেলোয়াড়ের একজন ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড হুলিয়ান
আলভারেজ। বাকি দুজন ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দি ও গোলকিপার হেরোনিমো রুই।
অলিম্পিক ফুটবলে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় সোনার পদক এনে দেওয়ার লক্ষ্যে কোচ
হাভিয়ের মাচেরানোর তুরুপের তাস হতে পারেন আলভারেজ। সিটির হয়ে গত মৌসুমে
প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পথে ৩৬ ম্যাচে ১১ গোল করেন ২৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
মার্তা (ব্রাজিল)
ছেলে
ও মেয়েদের ফুটবল মিলিয়ে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোল তাঁর। প্যারিস
অলিম্পিকে অধিনায়কত্বও করবেন ব্রাজিলের মেয়েদের ফুটবল দলের। এই ইভেন্ট
দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন ব্রাজিলের হয়ে ১৮৩ ম্যাচে ১১৮ গোল
করা কিংবদন্তি। ২০০৪ এথেন্স ও ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ব্রাজিলের হয়ে রুপা
জিতেছিলেন মার্তা। জাতীয় দলকে বিদায় জানানোর আগে প্যারিসে শেষবারের মতো
সোনার পদক জয়ের চেষ্টা করবেন পাঁচটি অলিম্পিকে গোল করা ৩৮ বছর বয়সী এই
কিংবদন্তি।
আলেক্সান্দার লাকাজেতে (ফ্রান্স)
ঘরের মাঠে অলিম্পিকে
আলেক্সান্দার লাকাজেতের কাঁধে ফ্রান্সের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিয়েছেন
দেশটির কোচ থিয়েরি অঁরি। ৩৩ বছর বয়সী লাকাজেত্তেও ফ্রান্সকে সোনার পদক
জেতাতে চান, ‘সবারই একই লক্ষ্য—সোনার পদক জয়। ঘরের মাঠে খেলা আমাদের অবশ্যই
অনুপ্রাণিত করবে।’ লিঁও ফরোয়ার্ড লাকাজেত্তে গত মৌসুমে ৩৫ ম্যাচে ২২ গোল
করলেও ২০১৭ সাল থেকে ফ্রান্সের হয়ে আর খেলার সুযোগ পাননি। গত মৌসুমের ফর্ম
দিয়ে অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফ্রান্সের জার্সিতে এখনো দেওয়ার আছে তাঁর।
আইতানা বোনমাতি (স্পেন)
অলিম্পিকের
ফুটবল ইভেন্টে এর আগে কখনো নারী দল পাঠায়নি স্পেন। কিন্তু এবার সোনার পদক
জয়ে অন্যতম ফেবারিট হিসেবেই প্যারিসে যাবে স্পেন নারী ফুটবল দল। গত বছর
আগস্টে নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর থেকে ১৪ ম্যাচের
মাত্র দুটিতে হেরেছে স্পেন। কোচ মন্তেৎসে তোমের স্কোয়াড তারকায় ভরপুর হলেও
এই দলে আলাদা করে নজর কাড়বেন বোনমাতি। স্পেনের হয়ে নেশনস লিগ এবং
বার্সেলোনার হয়ে এই মৌসুমে চার শিরোপা জয়ের পর ২৬ বছর বয়সী বোনমাতি কি
স্পেনকে সোনার পদক জেতাতে পারবেন?
আশরাফ হাকিমি (মরক্কো)
প্যারিস
অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টে দেশের হয়ে সোনার পদক জয়ের লড়াইয়ে নামতে যাওয়া বড়
তারকাদের একজন আশরাফ হাকিমি। ২৫ বছর বয়সী এই তারকা অলিম্পিক ফুটবলে
মরক্কোর প্রতিনিধিত্ব করায় তাঁর ক্লাব পিএসজির প্রাক্–মৌসুম প্রস্তুতিতে
অংশ নিতে পারবেন না। অলিম্পিকের ফুটবল ইভেন্টে এবার অষ্টমবারের মতো অংশ
নেবে মরক্কো। অলিম্পিকের আগে ভিলাফ্রাঞ্চে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে
দুটি পেনাল্টি মিস করেছিলেন হাকিমি। তবে অলিম্পিক ফুটবল শুরুর পর
‘অ্যাটলাস লায়ন’দের হাকিমি নিশ্চয়ই পার্ক দে প্রিন্সেসের ফাইনালে তোলার
চেষ্টা করবেন।
ওয়েন্দি রেনার (ফ্রান্স)
ফ্রান্স নারী ফুটবল দলের
কোচ হার্ভে রেনারের সঙ্গে ওয়েন্দি রেনারের কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই। তবে
কিংবদন্তি এই ডিফেন্ডারকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ প্যারিস অলিম্পিকের ফুটবল
ইভেন্টে ফ্রান্স নারী দলের অধিনায়কত্বের ভার অর্পণ করা হয়েছে বলে
জানিয়েছিলেন হার্ভে। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিক ও ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ফ্রান্স
ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ৩৪ বছর বয়সী এই লিঁও ডিফেন্ডার। দেশের
হয়ে এরই মধ্যে ১৬০ ম্যাচ খেলে ফেললেও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি
ওয়েন্দি।
ফারমিন লোপেজ (স্পেন)
কিছুদিন আগেই ইউরোজয়ী দল থেকে
স্পেনের ছেলেদের অলিম্পিক ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়া দুজন খেলোয়াড়ের একজন
বার্সেলোনার ফারমিন লোপেজ (অন্যজন অ্যালেক্স বায়েনা)। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত
ইউরোয় ২১ বছর বয়সী উইঙ্গার লোপেজ স্পেনের হয়ে মাত্র এক ম্যাচ খেলার সুযোগ
পেয়েছেন। লা লিগায় নিজের প্রথম মৌসুমে ১১ গোল করেছেন। ফুটবলে স্পেন সোনা
জিতলে দারুণ এক কীর্তিও গড়বেন লোপেজ ও বায়েনা। একই মৌসুমে ইউরো শিরোপা ও
অলিম্পিকের সোনার পদক জেতা প্রথম দুই আউটফিল্ড খেলোয়াড় হবেন তাঁরা।
লিন্দা কাইসেদো (কলম্বিয়া)
মাত্র
১৯ বছর বয়সেই নারী ফুটবলের অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে নজর কেড়েছেন লিন্দা
কাইসেদো। ২০২৩ নারী বিশ্বকাপে নিজেকে চিনিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের এই
ফরোয়ার্ড। ব্রাজিলের মার্তার পর দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ (১৮ বছর ১৫৩ দিন)
খেলোয়াড় হিসেবে নারী বিশ্বকাপে গোল করেন লিন্দা। গ্রুপ পর্বে জার্মানির
বিপক্ষে তাঁর গোলটি ভোটে টুর্নামেন্ট–সেরার স্বীকৃতি পায়। মনোনীত হয় পুসকাস
পুরস্কারের জন্যও।
নবি কেইতা (গিনি)
অলিম্পিক ফুটবলে এ নিয়ে
দ্বিতীয়বার অংশ নিচ্ছে গিনি। লিভারপুলের সাবেক মিডফিল্ডার নবি কেইতা এবার
গিনির অধিনায়ক। চোট ও নিষেধাজ্ঞার কারণে বুন্দেসলিগার দল ভেরডার ব্রেমেনের
হয়ে গত মৌসুমটা ভালো কাটেনি কেইতার। মাত্র ৫টি ম্যাচ খেলেছেন। গিনির হয়ে ১১
গোল করা এই তারকা অলিম্পিকে নিশ্চয়ই দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাইবেন।
বারব্রা বান্দা (গাম্বিয়া)
গত
মার্চে চীনের ক্লাব সাংহাই শেংলি থেকে নারী ফুটবলের ইতিহাসে দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় হিসেবে অরল্যান্ডো প্রাইডে যোগ দেন বারব্রা বান্দা।
এনডব্লিউএসএল লিগের এই দলে যোগ দিয়ে নিজের দামের যৌক্তিকতাও প্রমাণ করেছেন
২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার। এই লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নিজের
প্রথম ১১ ম্যাচে ১১ গোল করেন। এনডব্লিউএসএলে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবার
গাম্বিয়ার হয়ে দ্বিতীয়বার অলিম্পিক ফুটবলে অংশ নেবেন।