‘বাইরে
মারামারি-গোলাগুলি। ভয়ে পাঁচটা দিন বের হইনি। ধার-দেনা করেছি, কম খাইয়া
থাকছি। আর তো চলে না। আইজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। কোনো কাম-কাজ তো পাই না।
এহন নিজে খামু কী? বউ-বাচ্চাদের খাওয়ামুডা কী? সরকার আমাগো দিকে না তাকাইলো
আর বাঁচমু না।’
কথাগুলো বলছিলেন মধ্যবয়সী আকবর আলী। থাকেন রাজধানীর
বাড্ডার এগারো সরণি এলাকায়। প্রতিদিন সকালে বাড্ডা এলাকার রাস্তার ফুটপাতে
দাঁড়ান। কেউ কাজের জন্য ডাকলে সেখানে গিয়ে মজুরিভিত্তিতে কাজ করেন। দিনের
আয়ে দিন চলে তার। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গত কয়েকদিন কর্মহীন আকবর আলী।
বুধবার
(২৪ জুলাই) অফিস-আদালত খুলছে এমন খবরে ভোরে মধ্যবাড্ডার লুৎফুন টাওয়ারের
সামনের ফুটপাতে কাজের সন্ধানে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বেলা সাড়ে ৯টা পর্যন্ত
কেউ কাজের জন্য ডাকেনি তাকে। আজও কোনো কাজ পাবেন কি না, সেই অনিশ্চয়তা আকবর
আলীর চোখেমুখে।
আকবর আলীর সঙ্গে কথা বলতেই চারদিকে আরও অন্তত ৫০-৬০ জন
ছুটে আসেন প্রতিবেদকের কাছে। তাদের ধারণা, কাজের জন্য লোক ভাড়া করতেই
সেখানে এসেছেন তিনি।
দৌড়ে এসে শওকত হোসেন নামে একজন বলতে শুরু করেন,
‘ট্যাকা যা দিবার দিয়েন, আমারে নেন স্যার। সারাদিন কাম-কাজ করে দিমু।
দুপুরে খাওন আর কিছু ট্যাকা দিয়েন...।’
শুধু আকবর ও শওকত নয়,
মধ্যবাড্ডার লুৎফুন টাওয়ারের সামনে বুধবার সকালে অন্তত দুইশ মানুষকে
রাস্তায় কাজের সন্ধানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী।
অনেক বৃদ্ধও রয়েছেন। আবার কয়েকজন øাতক পাস বলেও জানান। তারা লোকলজ্জায়
গণমাধ্যমে কথা বলতে চান না।
ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে মোকাব্বের আলী নামে এক
বৃদ্ধ বলেন, ‘ভবন নির্মাণকাজ করি আমরা। বিল্ডিংয়ের কাজ চালু করলেই আমরা কাজ
পাবো। আয়-রোজগার করে খাইতে পারমু।’ ফারুক হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি বলেন,
‘আমাদের আয় নেই, খাওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী
ধনীদেরকে বলেছেন,
গরিবদের সহায়তা করতে। আপাতত একটা-দুইটা দিন যদি আমরা সহায়তা পেতাম, ধীরে
ধীরে কাজ চালু হলে আয় হতো।’ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে
গত ১৯ জুলাই রাত থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করে সরকার। মোতায়েন করা হয়
সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গত রোববার, সোমবার ও
মঙ্গলবার (২১, ২২, ২৩ জুলাই) সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানো হয়।
সবশেষ বুধবার ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় কারফিউ জারি
রয়েছে। তবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসব জেলায়ও কারফিউ শিথিল
থাকবে। তাছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সব অফিস, ব্যাংক, আদালতের
কার্যক্রম চলবে।