কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’
কর্মসূচিতে সারা দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জনজীবনে ভোগান্তি দেখা দেয়। স্থবির
হয়ে পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য। এক সপ্তাহের টানা অচলাবস্থার পর গতকাল থেকে সচল
হতে শুরু করেছে দেশ।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ
শিথিল ছিল। গত বুধবার কারফিউ শিথিল থাকার সময় দেখা যায়, সড়কে বেড়েছে
যানবাহন, দোকানপাট খুলছে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে। কোটা সংস্কার
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
বাজারে সবজি, কাঁচা মরিচ, মুরগি ও মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়।
ঘাটতির প্রভাবে বাজারে এসব পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়ে যায়।
কারফিউ শিথিল করার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগি, মাছ ও সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে দাম।
উল্লেখ্য,
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকার যে
পরিপত্র জারি করেছিল, গত ৫ জুন সেই পরিপত্র অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত
ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। এ রায়ের পর কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও
চাকরিপ্রার্থীরা। প্রথমে কিছুদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও পরে
আন্দোলনকারীরা অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেন। চলমান আন্দোলনের মধ্যে
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী।
গত ৯ জুলাই সে আবেদনে শুনানির পর
কোটাসংক্রান্ত বিষয়বস্তুর ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন সর্বোচ্চ আদালত। গত
১৬ জুলাই চলমান আন্দোলন সংঘাতে রূপ নেয়। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বা রায় পর্যন্ত
অপেক্ষার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বিচার বিভাগীয়
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অস্থিতিশীলতা নিরসনে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে
সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। প্রথম দফায় তা গত শনিবার দুপুর ১২টা
পর্যন্ত বলবৎ ছিল। দুপুর ২টা থেকে আবার কারফিউ শুরু হয়। গত রবিবার বিকেল
৩টা পর্যন্ত তা বলবৎ ছিল। এরপর বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল
করা হয়। গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত রবিবার ও সোমবার
নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
কলকারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন
অন্তত এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ।
কারফিউ ও সাধারণ ছুটির ফলে জনজীবন অনেকটা স্থবির। ইন্টারনেটসেবা বন্ধের
জেরে ধস নেমেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে। ইন্টারনেটসেবা বন্ধ
থাকায় গত বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
হয়ে পড়ে দেশ। টানা প্রায় পাঁচ দিন ইন্টারনেটসেবা বন্ধ থাকায় স্থবির
অনলাইনভিত্তিক সব কার্যক্রম। এতে ফ্রিল্যান্সিংসহ নানা পেশার মানুষ
ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গতকাল কারফিউ শিথিল করার পর দেখা গেছে
মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু
করেছে। সব অচলাবস্থা কেটে যাবে-এই প্রত্যাশা আমাদেরও।