বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪
১৪ কার্তিক ১৪৩১
কোটা আন্দোলন: চিংড়ি রফতানি বন্ধ থাকায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২:০১ এএম |


কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে চিংড়িশিল্প। সহিংসতারোধে ইন্টারনেট বন্ধসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার ফলে গত এক সপ্তাহে চিংড়িশিল্পে অন্তত ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রফতানিকারকরা। পাশাপাশি ২০০ মেট্রিক টন হিমায়িত চিংড়ি রফতানির অপেক্ষায় আছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট চালু হলে ক্রয়াদেশ পেলে এগুলো রফতানি হবে। সেইসঙ্গে এই অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
রফতানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঘেরে পর্যাপ্ত মাছ আছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। বিক্রি করতে না পারায় মাছের জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত খাবার জোগাতে হচ্ছে। ফলে লোকসান বাড়ছে। কেউ কেউ ঘেরকে চিংড়ি পোনা ছাড়ার উপযোগী করতে বাধ্য হয়ে অর্ধেক দামে মাছ বেচে দিচ্ছেন। তারাও গুনছেন লোকসান। কোটা আন্দোলন ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে সরবরাহ কমের অজুহাতে মাছ চাষের উপকরণের দাম বাড়ায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন চাষিরা।
চিংড়ি রফতানি ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় এই ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিদেশে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, ক্রেতারা টাকা পাঠালেও তা ব্যাংকে ঢুকছে না। সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংক খুললেও ইন্টারনেট পূর্ণ মাত্রায় চালু না হওয়ায় এই খাতের অচলাবস্থা কাটছেই না।’
চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর গোডাউন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে উল্লেখ করে বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এখন মাছ রাখার জায়গা নেই। স্থানীয় বাজারে মাছ কেনাবেচা ও পরিবহনের ওপর কারফিউ শিথিল থাকলেও বিক্রি কম হচ্ছে। আবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় চিংড়ি কেনা হলেও বিক্রেতাদের বিল পরিশোধ করা যায়নি। ফলে মাছ কোম্পানি থেকে শুরু করে খামারি পর্যন্ত সব পর্যায়ের ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল, টাকা নেই, রফতানি বন্ধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইন্টারনেট না থাকায় গত এক সপ্তাহে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনও টাকা ব্যাংকে আসছে না। সবকিছু অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় রফতানিযোগ্য চিংড়ি শিপমেন্টও করা যাচ্ছে না। ক্রয়াদেশও পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও প্রকার ডকুমেন্ট আনা-দেওয়া যাচ্ছে না। বিদেশ থেকে টাকা পাঠালেও, তা ঢুকছে কিনা দেখা যাচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনার মডার্ন সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক সাইফুদ্দিন তনু বলেন, ‘আমাদের চার কনটেইনারে ৮০ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানির অপেক্ষায় পড়ে আছে। ইন্টারনেট জটিলতার কারণে সব ধরনের বিল আটকে আছে। শিপিং লাইন্সের ক্লিয়ারিং পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে আমাদের।’
প্রতিদিন এজেন্টরা আমাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন উল্লেখ করে সাইফুদ্দিন আরও বলেন, ‘কিন্তু তারাও দেখছেন অচলাবস্থার চিত্র। ফলে পেমেন্ট না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।। অধিকাংশ রফতানিকারক এজেন্টের মাধ্যমে মাছ কেনেন। একেকজন এজেন্টের অধীনে আছেন ১০-১২ জন খুচরা ক্রেতা। তারা ডিপো কিংবা ঘের থেকে মাছ কেনেন। অর্থাৎ রফতানিকারক থেকে শুরু করে উৎপাদক পর্যায়ে যতগুলো মাধ্যম আছে, সবক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে এই অবস্থার নিরসন হবে।’
খুলনার খামারি জাকির হোসেন বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ঘিরে এই সংকটে পড়তে হয়েছে খামারিদের। দোকানে গিয়ে চিংড়ির খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও খাবার সরবরাহ ঠিক হয়নি। ফলে বেশি দামে খাবার কিনতে হচ্ছে। আবার মাছও বিক্রি করা যাচ্ছে না। কারণ রফতানি বন্ধ আছে।’
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের এজেন্ট মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ‘পেট্রাপোলে গত এক সপ্তাহ ধরে পড়ে ছিল ৫০ মেট্রিক টন চিংড়ি খাবার। ইন্টারনেট না থাকায় কাস্টমসের কাজ বন্ধ থাকায় খাবারগুলো বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে বুধবার সেগুলো বেনাপোল দিয়ে দেশে ঢুকেছে। কাস্টমসের কাজ শেষে খুলনায় পৌঁছাতে আরও দুদিন লাগবে। খাবার সরবরাহ বন্ধ থাকায় চাষিরা সংকটে পড়েছেন। ইতোমধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আশা করছি, সবকিছু ঠিক হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
তবে অচলাবস্থার ফলে খুলনার চিংড়ি উৎপাদনকারীদের কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি বলে দাবি করেছেন খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র ব্যাংক লেনদেনে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ইন্টারনেট চালু হওয়ায় এখন আর সে সংকট থাকবে না বলে আশা করছি।’
খুলনা বিভাগীয় শ্রম দফতরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলন ঘিরে অচলাবস্থার ফলে চিংড়ি খাতে অস্থায়ী শ্রমিকদের পাশাপাশি বেশি সংকটে পড়তে হয় পরিবহন ও হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের। এ ছাড়া যারা দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক তাদের আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সবকিছু চালু হওয়ায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।’













সর্বশেষ সংবাদ
মনোহরগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পি.পি. নিযুক্ত হলেন অ্যাড. সুজন
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
টুটুল পালালেন অস্ট্রেলিয়ায়
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা সদরের সাবেক চেয়ারম্যান টুটুল অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ পেলেন ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া
কুমিল্লায় ১৮ দিনে ২৭ অভিযানে ৬৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২