বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪
১৪ কার্তিক ১৪৩১
একযোগে হামলা কার ইশারায়?
আদিত্য আরাফাত
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২:২৩ এএম |


 একযোগে হামলা কার ইশারায়?
শুধু সরকারি চাকরি প্রত্যাশী নয়; আমজনতার অনেকেও মনে করে কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার প্রয়োজন। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবার শিক্ষার্থীদের সমর্থন করেছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। আন্দোলন দ্রুতই জনদাবিতে রূপ নেয়। রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা মাঠে নামে। দাবি আদায়ে স্লোগানে মুখর হয় ক্যাম্পাস। রাজপথ দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
শেষ পর্যন্ত এ আন্দোলন শিক্ষার্থী আর সরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের হাতে থাকলো না। আন্দোলন যখন জমে উঠছিল তখন এ আন্দোলনে চোখ পড়ে নেপথ্যে থাকা সুযোগ সন্ধানীদের। এসব সুযোগ সন্ধানীরা শিক্ষার্থী আর চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলনের সঙ্গে সুকৌশলে মিশিয়ে দেয় একদল বিপথগামী কিশোর-যুবকদের।
এসব উচ্ছৃঙ্খল কিশোর-যুবক আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ছুড়তে থাকে ইট-পাটকেল। ক্ষুব্ধ করে তাদের। নেপথ্যে যারা কলকাঠি নেড়েছে তারা বুঝেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খ্যাপিয়ে না তুললে এ আন্দোলন জমবে না।
এর করুণ পরিণতি ভোগ করে একদল নিরীহ শিক্ষার্থী আর পথচারী। একের পর এক নিরীহ শিক্ষার্থী আর পথচারী বুলেটে রক্তাক্ত হয়। পরিস্থিতি সমাধানের বদলে সংঘাতের দিকে চলে যায়। ঠিক এমনটাই চেয়েছিল নেপথ্যের হোতারা। যারা বসেছিল এমন এক মোক্ষম আন্দোলনকে পুঁজি করতে।
বুলেটে নিহত যেসব নিরীহ শিক্ষার্থী আর মানুষ মারা গেছে সেসব সন্তানহারা বাবা-মায়েরা এ ক'টা রাত কীভাবে পার করেছে জানি না। কারও কারও একটি মাত্রই সন্তান ছিল। এ শোকের কোনো ভাষা নেই।
গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের রাজধানীর রাজপথে থাকতে হয়েছে। কখনো কাছ থেকে কখনো কিছুটা দূরে থেকে দেখেছি একের পর এক নারকীয় তা-ব! আন্দোলন সহিংসতায় রূপ পাওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সরে যায়। পুলিশ পেটানো, গণমাধ্যমের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস দেখে একপর্যায়ে শিক্ষার্থী আর আন্দোলনকারী চাকরি প্রত্যাশীরা নিজেদের গুটিয়ে নেয়।
এ আন্দোলনকে পুঁজি করে শেষদিকে এক যোগে ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছিল দুর্বৃত্তরা। একে একে পুলিশ বক্স, সরকারি অফিস, উড়াল সেতু, গণমাধ্যমের গাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পিটিয়ে প্রাণে শেষ করে ফেলে অনেককে। মানুষের মোবাইল মানিব্যাগ ছিনতাইয়ে মেতেছিল নাশকতাকারীদের কেউ কেউ।
পুলিশ বক্সে এসি খুলে লুট করে নিয়ে যায়। সড়কের গাছ কেটে রাস্তায় জ্বালিয়ে দেয় আগুন। গরিব রিকশা চালকের রিকশায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় করা হয় উল্লাস। টেলিভিশনের গাড়ি দেখলেই ভাঙচুরের নেশায় মত্ত থেকেছে নাশকতাকারীরা। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে নির্মমভাবে। একটি টেলিভিশনের গাড়ি থামিয়ে যখন সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলা হচ্ছিলো তখন গাড়ির ভেতরে সাংবাদিক বলছিল, ‘আমাদের মিডিয়া মালিক সরকার সমর্থিত কেউ নয়।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা! কলার চেপে ধরে রাস্তায় নামিয়ে ঠোঁটের কোণে সিগারেট চেপে একজন হামলাকারী বলেন, 'কোনো কথা নাই সাংবাদিক পাইলেই মাইর'।
এরপর হামলাকারীদের থেকে প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে একটি বাসায় আশ্রয় নেন টেলিভিশনের রিপোর্টার, ক্যামেরাম্যান এবং ড্রাইভার। তারপর পুড়িয়ে দেওয়া হয় টেলিভিশনের গাড়ি। গণমাধ্যমের অনেক গাড়ি এভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি যেকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী শুনলে তাদের ওপরও করা হয়েছে আক্রমণ। সরকারি চাকরি করা যেন অপরাধ। আগেই বলেছি, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় যারা এসব ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছিল তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিপদগামী কিশোর-যুবক। যাদের দেখলেই অনুমান করা যায় নেশাগ্রস্ত। ওদের চোখে মুখে যে হিংস্রতা দেখেছি তা ভয়ানক! যেন পুরো বাংলাদেশকে ওরা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে চায়।
বিপথগামী এসব কিশোর-যুবকদের কেউ ব্যবহার করেছে কি না তা সুষ্ঠু তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে। এদের অর্থদাতা বিদেশি কোনো শক্তি কি না তাও খুঁজে বের করা দরকার। এবারের সহিংসতা দেখে মনে হয়েছে আগামীতে যেকোনো ঘটনায় এদের ব্যবহার করতে পারে যেকোনো পক্ষ।
জীবনের মায়া ছাড়াই রাস্তায় নামতে পারে শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা এসব কিশোর-যুবক। এদের ব্যবহার করে বাংলাদেশকে ভয়ংকর বিপদে ফেলতে পারে। এদের দেখেছি গাড়ির ওপর হামলার সময় ভেতরে নারী নাকি শিশু আছে তাও হিসেব করছে না।
রাজধানীর কয়েকটি স্পটে পেশাগত পরিচয় গোপন রেখে দায়িত্বপালনের সময় দেখেছি এরা গাড়িতে প্রথমে ইট মেরে পরে লাঠি আর ইট দিয়ে সমানে গাড়ির জানালা ভেঙে ফেলছে। কোনো কথা না শুনে গাড়ির ভেতরে লোকজনকে পেটাতে থাকে। তারপর গাড়িতে জ্বালিয়ে দেয় আগুন। এসব দুষ্কৃতকারী কোনো দল বা মহলের নয়। যেকোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এদের ব্যবহার করতে পারে।
নাশকতায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট আর ধ্বংসের যে উল্লাস হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। হাসপাতালে পর্যন্ত হামলা করা হয়। হাসপাতালের অপরাধ কী? রোগী আনতে যে অ্যাম্বুলেন্স যাবে তারও উপায় ছিল না! কোথাও কোথাও অ্যাম্বুলেন্স গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো দলের নয়। এসব সম্পদ জনগণের। দেশের আপামর মানুষের এসব সম্পদ কারা পুড়িয়ে দিতে চায়? মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে যত সহজ করেছে তাতে কার ক্ষতি হলো?
কোটা ইস্যু নিয়ে শুরু হয়েছিলো আন্দোলন। নানা জল ঘোলার পর শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণও হলো সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে। ৯৩ শতাংশ মেধায়, আর ৭ শতাংশ কোটার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা দাবি অনুযায়ী কোটা পেল। যা নিয়ে আন্দোলন তার অনেকটা সুরাহা হলো কিন্তু অসংখ্য শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিকের রক্ত যে বাংলার বুকে পড়লো তার দায় কার?
অনেক ধ্বংসযজ্ঞের পর, কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শেষদিকে পুলিশও নামে চিরুনি অভিযানে। এ অভিযানে নামার পর হাজারও ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকরা প্রত্যাশা করে, এসব অভিযানে নিরীহ মানুষ যেন জুলুমের শিকার না হয়। নিরীহ মানুষ যেন বিপদে না পড়ে। এসব অভিযানে পাইকারি গ্রেপ্তার অভিযানে সুফল বয়ে আনবে না। ধ্বংসযজ্ঞে যারা জড়িত তাদের প্রমাণ সাপেক্ষে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে পারলে ভালো থাকবে আগামীর বাংলাদেশ। 
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, ডিবিসি নিউজ












সর্বশেষ সংবাদ
মনোহরগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পি.পি. নিযুক্ত হলেন অ্যাড. সুজন
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
টুটুল পালালেন অস্ট্রেলিয়ায়
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা সদরের সাবেক চেয়ারম্যান টুটুল অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ পেলেন ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া
কুমিল্লায় ১৮ দিনে ২৭ অভিযানে ৬৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২