নিজস্ব
প্রতিবেদক : সরকারপ্রধানের যে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কার
আন্দোলনকারীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলছেন, তার সেই বক্তব্য ‘বিকৃত করা হয়েছিল’।
তিনি বলেছেন,
“মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দিকেই যেন তাদের বেশি ক্ষোভ। আমার
একটা কথা নিয়ে কতদিন প্রতিবাদ করল, কী কথা বলেছিলাম আমি? আমার কথাটাকে
বিকৃত করা হয়েছিল। তাদের স্লোগানটা কী? ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার।
তোমার বাবা, আমার বাবা- রাজাকার রাজাকার।’
“তার মানে তারা নিজেদেরকেই
রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিল। আমি তো তাদের রাজাকার বলিনি, তারা নিজেরাই
স্লোগান দিয়ে নিজেদেরকে রাজাকার হিসেবে পরিচিত করল সকলের কাছে।”
শিক্ষার্থীদের
আন্দোলনের মধ্যে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের শিকার বিটিভি ভবনের অবস্থা
দেখতে শুক্রবার সকালে রাজধানীর রামপুরায় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি
ওই বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৪ জুলাই এক
সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের
রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে
মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন?
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা
(চাকরি) পাবে?
“মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে,
নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না
খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন
করেছে।”
এই বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা
স্লোগান ধরেন– ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার/ কে বলেছে কে বলেছে,
স্বৈরাচার সরকার’।
একাত্তরের অনুপ্রেরণাদায়ী ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি
বাঙালি’ স্লোগানকে এভাবে বদলে দেওয়ায় সে সময় আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেন
অনেকে। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তার দুই দিন
বাদে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে; ঢাকাসহ আশেপাশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি
তৈরি হয়, তা-ব চালানো হয় বিটিভিসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
বিটিভিতে
হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “’৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে
এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে বিটিভিতে বিভিন্ন
উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছি। কিন্তু আজকে এতবছর পর এসে দেখা
গেল, সেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যে নারকীয় তা-ব, তারই যেন
একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু
টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন
সেন্টারটাকে যারা এইভাবে পোড়াল, একটা কিছু নেই যে রক্ষা পেয়েছে! তাহলে এরা
কারা, এরা কি এদেশেরই মানুষ?”
বিভিন্ন সময় বিটিভিতে আসার কথা স্মৃতিচারণ
করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে অতীতের কথা মনে পড়ে, আমি কতবার এখানে
এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে
এসেছি। আজকে যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম, এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা
যাবে, জানি না “
এ সময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, “এগুলো দেখে
আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না। এক একটা জিনিস যখন গড়ে তুলে অনেক কষ্ট করেই
করতে হয়। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি; সেটাতো আমার দেশের মানুষেরই জন্য।
একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি- যাতে এগুলো শুধু দেশে নয়,
বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়।”
ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে
দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতই অগ্নিসন্ত্রাস
করেছে; তবে এবার আলাদাৃতারা গান পাউডার ব্যবহার করেছে।”
সবার উদ্দেশে
তিনি বলেন, “যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে
যেখানে আছে- তাদের খুঁজে বের করুন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য
সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাই।
“দেশবাসীকে বলব,
ঢাকাবাসীকে বলব- যাদের জন্য আজকে আপনাদের এই দুর্ভোগ, যারা ধ্বংস করল,
যাদের জন্য আজকে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে; আমি তাদের
বিচারের ভার এদেশের জনগণের ওপরই দিয়ে যাচ্ছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা
এদেশের মানুষের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়েছে, রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দিয়েছে,
তাদের বিচার জনগণকেই করতে হবে। কারণ এদেশের জনগণই একমাত্র শক্তি।”
কেউ
মিথ্যাচার চালিয়ে যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকার আহ্বান
জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে কাউকে যেন বিভ্রান্ত
করতে না পারে। (সবাই) আসল সত্যটা জানুক। দেশের সম্মান নষ্ট করতে এখনো ফোন
করে লন্ডনে বসে- বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের উসকে দিচ্ছে।”