ইলেকট্রনিক
ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সুরক্ষা নিশ্চিতে এবার ঢাকার বাইরেও ওয়্যারহাউজ
তৈরির পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে অঞ্চল ভিত্তিক
ওয়্যারহাউজ নির্মাণের দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় ওয়্যারহাউজ নির্মাণের আলোচনার পর এমন
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইভিএম প্রকল্প পরিচালক ও সকল আঞ্চলিক
কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন সংস্থাটির সচিব শফিউল
আজিম।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য অঞ্চলভিত্তিক
ওয়্যারহাউজ তৈরির খসড়া ডিজাইন, জমি এবং অন্যান্য ব্যয়ের প্রাক্কলন প্রদান
করতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চাহিদা
প্রেরণ করতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন নির্বাচনের ব্যবহৃত
ইভিএম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকায় নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বলে
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সতর্ক করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা।
তারা
বলেন, বর্তমানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত আছে এবং কিছু কিছু
প্রতিষ্ঠানের নিচ তলায় স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় আছে। এতে ইভিএমগুলো
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভিএম সংরক্ষিত
থাকায় সে সকল প্রতিষ্ঠানে পাঠদানেও অসুবিধা হচ্ছে। এই অবস্থায় ১০টি অঞ্চলে
ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়ারহাউজ তৈরি করার প্রতি জোর দেন তারা।
নির্বাচন
কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল,
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীর মধ্যে সম্প্রতি
ঢাকায় একটি ওয়্যার হাউজের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে উন্নতমানে এই ভোট
যন্ত্রগুলোর সুরক্ষায় ইসির কোনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই।
ইসি সচিব শফিউল
আজিম এ নিয়ে বলছেন, ইতোমধ্যে তারা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে একটি
ওয়্যারহাউজ তৈরির জন্য জমি চাওয়া হয়েছে। জমি পেলে ইভিএম সংরক্ষণসহ সার্বিক
ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
জানা গেছে, এক-এগার সরকারের সময়কার ড. এটিএম
শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু
করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে মেশিন তৈরি করে নেয়। ওই
কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও
ভোটযন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি
মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন।
পরবর্তীতে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূলের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার
সিদ্ধান্ত উন্নত মানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়।
২০১৭ সালে কেএম
নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে
মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক
পূর্বে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে উন্নতমানের
ইভিএম তৈরি করে নেন তারা। এতে মেশিন প্রতি ব্যয় হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার
মতো। হাতে নেওয়া হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প।
সেই প্রকল্প থেকে
দেড় লাখ ইভিএম কেনে রকিব কমিশন। প্রকল্পের সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও
মেরামতের ব্যবস্থা না থাকায় সেই উন্নত মানে ইভিএম মেয়াদ ১০ বছর হলেও পাঁচ
বছর যেতে না যেতেই অকেজো হওয়া শুরু করে। কন্ট্রোল ও ব্যালট ইউনিট মিলে একটি
সেট, যা একটি ইভিএম হিসেবে ধরা হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালে
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এসে প্রায় প্রতিটি সেটেই কোনো না কোনো
সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী পড়ে।
অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিনের মধ্যে অধিকাংশগুলোতে ধরা পড়ে নানা ধরনের
ত্রুটি। কিন্তু মেরামতের জন্য ছিল না নতুন কোনো অর্থের জোগান। ফলশ্রুতিতে
হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। অকেজো মেশিন
মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য সাড়ে ১২শ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক
অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। বর্তমানে অকেজো ইভিএমের
সংখ্যা আরো বেড়েছে।
ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান
বলেন, বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজার মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী। আর ৪০ হাজারের মতো
মেশিন নির্বাচনে ব্যবহার করা যাচ্ছে। তবে শতভাগ ত্রুটিমুক্ত মেশিন একটিও
নেই। সব মেশিনেই কোনো না কোনো সমস্যা আছে। তবে সেগুলো সারিয়ে নির্বাচনে
ব্যবহারযোগ্য।
তিনি বলেন, আসল কথা হলো দক্ষ লোকবলের অভাব। আমাদের
প্রকল্প থাকলেও সেখানে দক্ষ কারিগরি লোকবল নেই। যারা ছোটখাটো সমস্যা হলে
সমাধান করতে পারে। আগেও যে ইভিএম ছিল তখনো কারিগরি লোকবল নিয়ে ভাবনা হয়নি।
এখনো নেই। এছাড়া সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি প্রকল্পে।