সর্বনাশা রাজনীতির ভয়ংকর অস্ত্রের আঘাতে দেশ
ক্ষতবিক্ষত, ক্ষতিগ্রস্ত। অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অর্থনৈতিক যে
সম্ভাবনাগুলো তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর ওপর আঘাত এসেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক অনেক বেশি।
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সহিংস এবং অনেক বেশি ধ্বংসকারী। ধ্বংসের উন্মত্ততা চলে গত কয়েক দিন।
এ
কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী
ও অপরাধীচক্র সংগঠিত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ও
পেয়ে থাকে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতার সুযোগ সব সময়ই
অপরাধীচক্র নিয়ে থাকে। অতীতেও এমন দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে
শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ইস্যুকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করে সারা দেশে
একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর
বিভিন্ন এলাকায় ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালালো হয়েছে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে,
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দলের।
তারা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল। ব্যাপক
সহিংসতার মধ্যে তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলার পরিকল্পনাও ছিল। মূল
লক্ষ্যবস্তু ছিল রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে,
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুতেই সারা দেশ থেকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ও
তাদের ছাত্রসংগঠনের অন্তত ৯ হাজার কর্মী ঢাকায় ঢোকেন।
এর মধ্যে এক
হাজারের বেশি অস্ত্রধারী ক্যাডার। তাঁরা ঢাকার প্রতিটি থানা এলাকায় অবস্থান
নিয়েছিলেন। নাশকতার আগে একাধিক বৈঠক করেন ষড়যন্ত্রকারী শীর্ষ নেতারা।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে নাশকতা চালাতে
বস্তির অল্পবয়সী কিশোরদের অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করা হয়। এরা নাশকতা, হামলা ও
সহিংসতার মধ্যে অনেক স্থানে লুটপাটও চালায়।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, কোটা
সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে গত কয়েক দিনে দেশের কয়েক হাজার কোটি টাকার
সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করাও সহজ হবে না। গত ১৫ বছরে দেশের
অর্থনীতির যে অগ্রগতি হয়েছে, তা ধ্বংস করে দেশকে আবারও পিছিয়ে দেওয়া
হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে প্রায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষত
সৃষ্টি হয়েছে, তা সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নাজুক অর্থনৈতিক
অবস্থার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংস পরিস্থিতির কারণে
এই শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আন্দোলন থামাতে ইন্টারনেট বন্ধ করার
পাশাপাশি কারফিউ জারি করায় ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা
খেয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ দেশজুড়ে যে নাশকতা হলো,
এটাকে ভয়ংকর একটা ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এত মানুষের
প্রাণহানি, যেসব রাষ্ট্রীয় বড় বড় স্থাপনা দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত,
সেগুলোতেই বেশি হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। তাঁরা মনে করেন এটা জাতির
জন্য কলঙ্কময়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের
সময় হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রো রেল স্টেশন
পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শন শেষে সেখানে
উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, দেশব্যাপী তা-বের সঙ্গে জড়িত
অপরাধীদের বিচার দেশের জনগণকে করতে হবে। জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন
তিনি।
উদ্যমী জনগোষ্ঠীর অন্তহীন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে
এগিয়ে যাচ্ছিল। অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১৫ বছরে
সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা সূচকে অনেক উন্নতি করেছে। আমরা চাই, দেশের উন্নয়নের
এই ধারা অব্যাহত থাকুক। সেই সঙ্গে সুশাসন ও প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা এগিয়ে
যাক।
তবে সবার আগে সরকারকে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক
পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। অর্থনীতির ক্ষত নিয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে হবে।