কোটা
সংস্কার ইস্যুতে অনাকাক্সিক্ষত কিছু পরিবেশ সৃষ্টির পর সরকার যখন অত্যন্ত
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছিল, ঠিক তখনই ওত পেতে থাকা গোষ্ঠী সুযোগ নিয়ে
দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে ভয়াবহ তা-ব চালায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের
উন্নয়নের প্রতীক এবং মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত মেট্রোরেল, সেতু ভবন,
ডাটা সেন্টার, নরসিংদী জেলা কারাগার, টোল প্লাজা, বিটিভিসহ যেসব স্থানে
তা-ব চালানো হয়েছে সেগুলো কোনও না কোনোভাবে বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক।
গণমাধ্যমে
প্রকাশিত গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের
নেতাকর্মী সারা দেশ থেকে গিয়ে রাজধানীর আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। তাদের
টার্গেট ছিল ঢাকা দখল করা। জামায়াত-বিএনপির দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় না থাকার যে
ক্ষোভ এবং অপ্রাপ্তি রয়েছে সেটির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা চাচ্ছিল যে কোটা
সংস্কার আন্দোলন যে কোনোভাবেই ঘোলাটে হয়ে যাক।
কোনও দল রাজনৈতিকভাবে
দেউলিয়া না হলে দেশের উন্নয়নের প্রতীকে আঘাত হানতে পারে না। এমনকি সাধারণ
জনগণের জানমালের ক্ষতিও করতে পারে না। যেখানে সরকার দেশের মানুষের উন্নয়নের
জন্য কাজ করে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের উন্নয়নে আঘাত হানা এবং
জানমালের ক্ষতি করার বিষয়টি দেশবাসীকে শঙ্কিত করে তুলেছে।
মূলত দেশের
উন্নয়নের প্রতীকে আঘাত হেনে দেশবাসীকে আতঙ্কিত করা এবং বিদেশিদের কাছে
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। দেশের কেন্দ্রীয় ডাটা
সেন্টারে আক্রমণ করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে
বিশ্ব নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা। পাশাপাশি বিদেশিদের মোবাইল বা
টেলিফোনে ভুল তথ্য প্রেরণ করা। তাদের আক্রমণ দেখে স্পষ্ট ধারণা করা যায় যে
মূলত কেপিআই স্থাপনাগুলোতে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আর এ ধরনের
আক্রমণ করার সামর্থ্য কোনও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী ছাড়া কারও পক্ষে মোটেই
সম্ভব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যেভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন
স্থানে হামলা চালিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই এবারও হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে তা ভাষায়
প্রকাশযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের বাঁচানোর জন্য অর্থাৎ
আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে কিছু ক্ষেত্রে পাল্টা আক্রমণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে সরকার সিভিল প্রশাসনকে
সহযোগিতা করার জন্য বাধ্য হয়ে সশস্ত্র বাহিনী নামিয়েছে। এমনকি কারফিউ দিতে
বাধ্য হয়েছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য। দেশের পরিস্থিতি কতটা
ধ্বংসাত্মক অবস্থায় নিয়ে গেলে একটি গণতান্ত্রিক সরকার সেনাবাহিনীর সমর্থন
প্রত্যাশা করে– সেটি আমরা সবাই অনুমান করিতে পারি।
হাজার হাজার কোটির
সম্পদ যেমন বিনষ্ট হয়েছে ওইসব হামলায়, ঠিক তেমনি কারফিউর কারণে অর্থনীতি
বিপর্যস্ত হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
এমন
ভয়াবহ হামলা যখন ভয়াবহ হামলা ও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে-তখন সেটি দেখে আর কারও
বুঝতে বাকি থাকেনি যে ওই হামলা এবং তা-ব সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়েছে। বাংলাদেশকে যেকোনোভাবেই অনিরাপদ প্রমাণ করতেই
মরিয়া হয়েছে বিএনপি-জামায়াত। প্রতিনিয়ত সরকারকে বিপাকে ফেলার টার্গেট নিয়েই
তাদের রাজনীতি। আর সরকারকে বিপাকে ফেলার লক্ষ্য না থাকলে কারও পক্ষেই
দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং জানমালের ক্ষতি করার বিন্দুমাত্র চিন্তা মাথায়
আসতো না।
লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।