বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪
১৪ কার্তিক ১৪৩১
বর্তমানে শিক্ষাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা সময়ের দাবি
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: রোববার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ১২:৪৩ এএম |

 বর্তমানে শিক্ষাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা সময়ের দাবি

বর্তমানে সরকার বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন। পদ্মা সেতু ছাড়া অনেক প্রকল্পের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা থেকে ঋণ হিসেবে নিয়েছেন। যদিও পরোক্ষভাবে ঋণকৃত অর্থের বিশাল একটি অংশ সে দেশেই চলে যাচ্ছে। তার কারণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য যেসব দক্ষ জনবল প্রয়োজন তা আমাদের দেশে বেশির ভাগই নেই। ফলে সে দেশের অভিজ্ঞ শ্রমিকগণ এসে এসব কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে অনেক অর্থ আমাদের দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। 
আমাদের দেশের তরুণ শিক্ষিত সমাজ দ্বারাও বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করানো সম্ভব। আমাদের শিক্ষানীতি নির্ধারকেরা যদি এই তরুণ সমাজকেই একটি মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করে, তবেই সম্ভব। বর্তমানে শিক্ষা খাতটা অনেকটাই অবহেলিত। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগোপযোগী শিক্ষাই যেখানে দেশের উন্নয়নের প্রধান ভরসা, সেখানে শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া না হলে শিক্ষকরা অবহেলিত থাকবেন এটাই সাভাবিক। তাই  শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এ খাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি, মেধার ভান্ডার বাড়ানোর জন্য উন্নততর গবেষণার প্রয়োজনে আলাদা অর্থ বরাদ্দ ও সময় উপযোগী শিক্ষার বাজেট রাখতে হবে।
 ইউনেস্কোর মতে, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্তত ৬ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। প্রতি অর্থবছরে এই বাজেট বরাদ্দ কমছেই। বাংলাদেশের বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে জিডিপির ১.৬৮ শতাংশ, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১.৭৬ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১.৮৩ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২.০৮১ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভুটানের শিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির ৬.৬ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৪.১ এবং ভারত  বরাদ্দ ২.৯ শতাংশ।
সূচকে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বর্তমানে  শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করা হলেও একজন প্রভাষকের মূল বেতন হয়েছে ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে নেপালে একজন প্রভাষকের মূল বেতন ২৮ হাজার ১৯২ টাকা। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা অনেক বেশি।  জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশের শিক্ষকদের মাসিক বেতন বাংলাদেশি টাকায় ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের স্বয়ংক্রিয়তা বা অটোমেশনের যুগে দেশের অগ্রগতিতে জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞান- মনস্ক জনশক্তিই যেখানে প্রধান ভরসা, সেখানে দেশের বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সনদপ্রাপ্ত শিক্ষিত  যুব জনগোষ্ঠী তৈরি করে কর্মহীন মানুষের দীর্ঘ তালিকাকে আরও দীর্ঘ করবে। আমাদের দেশের শিক্ষা খাত বরাবরই উপেক্ষিত। শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার বাস্তব প্রচেষ্টা ও জ্ঞানের মজুত বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট গবেষণা নেই। একজন মেধাসম্পন্ন শিক্ষকই তৈরি করতে পারেন একজন প্রতিভাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। তাই আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে  মেধাসম্পন্ন ব্যক্তির পরিমান শিক্ষকতা পেশায় আনতে হবে। 
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর  তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে বেসরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান (এমপিওভুক্ত) প্রায় ১৮৯৬৮ টি, সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান ৬৮৪ টি। বেসরকারি কলেজ (এমপিওভুক্ত) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩৩৪১ টি, সরকারি কলেজ ৬৩৭ টি। এই পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যায় সরকারি শিক্ষকদের চেয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের পরিমাণ অনেক বেশি। সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বেসরকারি শিক্ষকদেরই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। 
বর্তমানে আর্থিক সুযোগ সুবিধার সমস্যায় আমাদের শিক্ষকতা পেশা কিন্তু দিন দিন কারো কারো ক্ষেত্রে  বিপদের চাকরী হয়ে পড়ছে। অনেকে অন্য কোনো চাকরি পেলে শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এখনও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষকের পদ খালি। অনেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েও শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এর মূল কারণ বেশিরভাগ শিক্ষকদের মানবতার জীবন যাপন করা। এত স্বল্প টাকা বেতন পেয়ে কোনোভাবেই তাঁরা চলতে পারছেন না। আমরা এখন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি। এই সময়ে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার উন্নয়ন সবার আগে জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে। সেখানে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের প্রস্তাব করা হলেও, তা বাস্তবায়নে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  বর্তমানে পত্রিকা পড়লেই দেখতে পাই, দেশের উচ্চশিক্ষিত মেধাবীদের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। যার ফলে দেশটা একটা সময় মেধাশূন্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি আমরা এই শিক্ষিত সমাজের জন্য এখনই কিছু করতে না পারি, তবে ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না। 
বর্তমান সরকার বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন করছেন ঠিকই কিন্তু শিক্ষার গুনগত উন্নয়ন হচ্ছে তুলনামূলক কম। যেহেতু বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার ৪৬ শতাংশ তরুণ। সরকারকে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের মতো শিক্ষা খাতকেও বড় প্রকল্পের আওতায় নিয়ে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে  জ্ঞানভিত্তিক বিজ্ঞানমনস্ক জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষাকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা সময়ের দাবি।  
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ,বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।












সর্বশেষ সংবাদ
মনোহরগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পি.পি. নিযুক্ত হলেন অ্যাড. সুজন
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
টুটুল পালালেন অস্ট্রেলিয়ায়
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা সদরের সাবেক চেয়ারম্যান টুটুল অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ পেলেন ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া
কুমিল্লায় ১৮ দিনে ২৭ অভিযানে ৬৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২