ঢাকায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে বিভিন্ন সময়ে নিহত তিন জনের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাঁরা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। এর মধ্যে ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের একজন, বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের একজন ও রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের একজন। এ তিনজনের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। জানাজা শেষে তিনজনকে দাফন করা হয়েছে নিজ নিজ গ্রামের কবরস্থানে।
নিহতরা হলেন, ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. কাদির হোসেন সোহাগ (২৪)। বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. সাগর মিয়া (১৯) ও রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের মো. মানিক মিয়ার ছেলে দশ বছরের শিশু মো. হোসাইন মিয়া (১০) ।
নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২৪ বছরের যুবক কাদির হোসেন সোহাগ একটি কুরিয়ান সার্ভিস কোম্পানীতে চাকরি করতেন। থাকতেন ঢাকার গোপীবাগ এলাকার একটি মেসে। গত ২০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেসের বন্ধুদের সঙ্গে নাস্তার জন্য বের হয়। পরে রাত ৮টার দিকে একটি গুলি এসে সোহাগের বুকে লাগে। বন্ধুরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৩টার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ মারা যায়। অপর ঘটনায় জানা গেছে, ভ্যানে করে সবজি ও কলা বিক্রি করতেন মো.সাগর মিয়া। বাবা মায়ের সাথে থাকতেন মিরপুর এক নম্বরে।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার ভ্যান করে কাঁচামাল নিয়ে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে যান। সেখানে সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয় সাগর মিয়া। পরে কয়েকজন তাকে মিরপুরের একটি প্রাইভেট কিøনিকে নিয়ে গেলে রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে ছেলের সন্ধানে হানিফ মিয়া জানতে পারেন তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে একটি হাসপাতালে আছেন। হানিফ মিয়া দ্রুত ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার ছেলে ওই হাসপাতালের একটি মর্গে ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছে। ছেলের মরদেহ দেখে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন হানিফ মিয়া। পরদিন শনিবার সকালে তার মরদেহ দেবিদ্বারে নিয়ে আসে। দুপুরে জানাজা শেষে বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
অপর ঘটনায় জানা গেছে, মায়ের চিকিৎসার জন্য চিটাগাং রোড এলাকার বিভিন্ন বাসে বাসে চকলেট, পপর্কন আচার বেঁচতেন দশ বছরের হোসাইন মিয়া। মা বাবার সঙ্গে থাকতেন ওই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। গত ২০ জুলাই শনিবার বিকালে ভাত খেয়ে বাসা থেকে হয় হোসাইন। এরপর নিখোঁজ হয় হোসাইন। পরে চিটাগাং রোড এলাকায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হোসাইনের বুকের ডান পাশে গুলি লেগে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হোসাইন মারা যায়। পরে কয়েকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যায়। রাত ৯টার দিকে হোসাইনের বাবা মানিক মিয়া জানতে পারেন তার ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরে সেখানে গিয়ে মর্গের ভিতরে লাশের স্তপের ওপরে তার ছেলের মরদেহ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মানিক মিয়া। এরপর দুই দিন পর রবিবার রাতে মানিক মিয়ার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এরপর লাশ দেবিদ্বার উপজেলা রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামে নিয়ে আসেন। রাত তিনটার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।