সম্প্রতি
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত নাশকতায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ভবন। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে ভবনটি
জ্বলেছে টানা ৮ ঘণ্টা। এতে ১০ তলা এই ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে
ভবনের বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোরে লাগানো আগুনে এর পিলারগুলোর কার্যকারিতা
নষ্ট হয়েছে ব্যাপক।
গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের একটি দল এসব পিলারের
কার্যকারিতা নিরূপণে কাজ করছে বলে জানা গেছে। ওই দলের প্রতিবেদন পাওয়ার পর
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ভবন ভেঙে ফেলার
সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা
গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগুনের তাপে ইট, পাথর, বালু ও সিমেন্টের তৈরি
পিলারের কংক্রিট শক্ত ও কঠিন হলেও পিলারের ভেতরের লোহার রড প্রসারিত হয়ে
যায়। রড প্রসারিত হওয়ায় পিলারের কংক্রিট নড়বড়ে হয়ে যায়। এতে পিলারের শক্তি
ক্ষয় হয়, কমে যায় এর কার্যকারিতা। ফলে এমন পিলারের ওপর দাঁড়ানো যেকোনও ভবন
ভূমিকম্পসহ ভারী বজ্রপাতে ধসে পড়তে পারে। টানা কয়েক ঘণ্টা আগুনে জ্বলার ফলে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ভবনও এমন ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভবনের পিলারগুলো
কতটুকু কার্যকারিতা হারিয়েছে বা আগুনে জ্বলার পরে পিলারগুলোয় যে শক্তি
রয়েছে, তার ওপর বিদ্যমান ১০ তলা ভবনটি দাঁড়িয়ে থাকাটা কতটুকু নিরাপদ, তা
নিরূপণের জন্যই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কাজ করছে
গণপূর্ত বিভাগের একটি প্রকৌশলী দল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ
না করার শর্তে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী দলের এক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে
বলেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে আগুনে পোড়া ভবনটির ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো পরিদর্শন
করেছি। পিলারগুলোর কার্যকারিতা নিরূপণে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
এসব পরীক্ষার পর বোঝা যাবে ভবনটি কতটুকু নিরাপদ।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই
প্রকৌশলী জানান, আগুনের তাপে সব সময় লোহা প্রসারিত হয়। এটি লোহার
বৈশিষ্ট্য। তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ভবনের পিলারের রডগুলো আগুনের
তাপে কতখানি প্রসারিত হয়েছে, তা নিরূপণের জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। কিছু
পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই বলা যাবে ভবনটির বিদ্যমান পিলারগুলোর ওপর ১০ তলা
ভবনটি কতখানি নিরাপদ।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল
আহসান জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের বেজমেন্ট ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা সাত-আট ঘণ্টা আগুনে জ্বলার পর ভবনের পিলারগুলো
কতটা নিরাপদ, তা নিরূপণে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের একটি টিম কাজ করছে।
ওই টিমের প্রতিবেদনে যদি দেখা যায় ভূমিকম্প বা অধিক মাত্রার বজ্রপাতে ভবনটি
নিরাপদ নয়, সে ক্ষেত্রে ভবনটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। ১০ তলা ভবনটিতে অনেক
মানুষ কাজ করে। তাই কোনও ধরনের ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য,
আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে গত ১৮ জুলাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের
ভবনসহ ৫৩টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়, মোটরসাইকেল পোড়ানো হয় ১৩টি। ভবনের ভেতরে
ও বাইরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে
জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। এ হামলায় ভবনের বৈদ্যুতিক
সাব-স্টেশন, সার্ভার, ইমার্জেন্সি রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, অফিসের
যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়েছে। আগুনে পোড়া ১০ তলা ভবনটি অনেকটাই ঝুঁকিতে রয়েছে
বলে জানিয়েছে অধিদফতর সূত্র।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
নেতৃত্বাধীন সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করে। দুর্যোগের
ঝুঁকি হ্রাস করার কর্মসূচি গ্রহণ, কোনও দুর্যোগে দক্ষতার সঙ্গে সাড়াদান
এবং দুর্যোগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে
সমন্বয় সাধনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সার্বিকভাবে
সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে এই অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সংসদে
‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ পাসের মাধ্যমে এই অধিদফতর গঠিত হয়।
আরও
জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে সৃষ্ট ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর ও ১৯৯২ সালে সৃষ্ট
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো (ডিএমবি) অবলুপ্ত হয়ে ২০১২ সালে দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে রূপান্তরিত হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের উদ্দেশ্য
বাস্তবায়ন এই অধিদফতরের ম্যান্ডেট-ঝুঁকি হ্রাস কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে
বিভিন্ন দুর্যোগের বিপদাপন্নতা হ্রাস করা, বিশেষভাবে দরিদ্র ও
সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য কার্যকর মানবিক সহায়তা
কর্মসূচি গ্রহণ করা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জরুরি সাড়াদানের সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি এবং দাতা সংস্থাগুলো কর্তৃক
গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও পরিকল্পনা সম্পর্কিত সরকারের
নির্দেশাবলি এবং সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের
(ডিডিএম) অন্যতম দায়িত্ব।