উন্নত বিশ্বে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। গত কয়েক দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ও কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় বাঁচাতে হিমায়িত খাবারের চাহিদা বাড়ছে। বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেরও রপ্তানি বাড়ছে।
চার বছর আগে ইপিবির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই সময় হিমায়িত খাদ্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিশ্ববাজার ছিল বাংলাদেশের দখলে। প্রবাসী বাঙালি অধ্যুষিত দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশে হিমায়িত খাদ্যপণ্যের কদর বাড়ছে। বাজারসংশ্লিষ্টদের ধারণা, আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হিমায়িত ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন করা গেলে এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্ববাজারে।
বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং মাছ, মাংস, ডিম, শাক-সবজি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সৃজনশীল কৃষক পরম মমতায় মাঠে যে ফসল ফলান, তার অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষক উপযুক্ত মূল্য পান না। অথচ বিশ্ববাজারে আমাদের কৃষিপণ্যের চাহিদা ও সম্ভাবনা আছে।
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শাক-সবজি ও ফলমূলের চাহিদা রয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিয়মিত দেশি পণ্য চান। আবার বিদেশিরাও এখানকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের প্রতি আগ্রহী। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই খাতে প্রতিবছরই বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। গত বছর ৩৪টি দেশে দুই হাজার ৭০০ টন আম রপ্তানি করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় এক হাজার টন বেশি।
বিশ্ববাজারে দেশের আমের বিপুল চাহিদা থাকলেও উত্তম কৃষিচর্চাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে আম উৎপাদন ও প্যাকেজিং না হওয়ায় রপ্তানির পরিমাণ কম মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গুণগত মানের পণ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ লাইনে ঘাটতিসহ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষমতা না থাকায় রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে কৃষিপণ্য। যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং বিদেশে পাঠানো যায়, তাহলে কৃষক ও দেশের শিল্পের জন্য ভালো হবে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি বড় ধরনের চারটি প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে, রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা কমে যাওয়া, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় উপকরণ খরচ বেশি হওয়া এবং পর্যাপ্ত বন্দর সুবিধা না পাওয়া। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব সমস্যার কারণে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধু ব্যয়ই বাড়েনি, সময়ও বেশি লাগছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাড়তি ফ্রেইট চার্জ (পণ্য জাহাজীকরণের ভাড়া) দেশের প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য বড় বাধা। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে। বাংলাদেশে এই বাড়তি ব্যয়ের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুুবিধার অভাবে রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানিতে সময় বেশি লাগছে। আবার প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের উপকরণ ব্যয় বেশি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারের অভাব, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ভালো জাতের অভাব, ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট প্রাপ্তিতে জটিলতা, দুর্বল প্যাকেজিং পণ্য রপ্তানিতে বাধা হিসেবে কাজ করছে। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষিচর্চা (জিএপি) ও উত্তম উৎপাদনচর্চা (জিএমপি) বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।