‘৬
মেয়ে ও এক ছেলে এখন এতিম হয়ে গেল! আমি ওদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াব, এখন কে
ওদের দেখবে?’ কোটা আন্দোলনের সময় তলপেটে ও রানে গুলি লেগে নিহত আউয়াল মিয়ার
(৫৭) স্ত্রী ফাতেমা বেগম কেঁদে কেঁদে এ কথা বলছিলেন।
আউয়াল মিয়া ঢাকার
যাত্রাবাড়ি সংলগ্ন কুতুবখালি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে রাজ যোগালির কাজ
করতেন। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে
নিহত হন আউয়াল মিয়া। ঢাকা থেকে মরদেহ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর
ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫২) ও ছেলে
হাবিবুর রহমান (২৩)।
ফাতেমা বেগম বলেন, গোলাগুলির বিকট শব্দ শুনে বাসা
থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে যান আউয়াল মিয়া। হঠাৎ সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে
স্থানীয়রা তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানায়,
আউয়াল মিয়ার তলপেটে ও রানে ৩টি গুলি লেগেছে। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায়
রোববার সকালে সে মারা যায়। বাবাহারা ছেলে মেয়েগুলো এতিম হয়ে গেল। ওদের
কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।’
স্বামীকে হারিয়ে ৭ সন্তান নিয়ে দিশেহারা
হয়ে পড়েছেন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাড়ি-ঘর নেই, সরকারি খাস জায়গায়
থাকি। আমাদের সংসার চালানোর মতো কেউ নেই। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবো ভেবে
উঠেতে পারছি না।’
এ দিকে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত
উদ্দিন শুক্রবার বিকেলে নিহত আউয়াল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে বিধবা ফাতেমা বেগমকে
২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। পরিবারটি ভূমিহীন জানতে পেরে
তিনি সর্বাত্বক সহযোগিতা করার আশ^াস দেন। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম
আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আউয়াল মিয়ার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর
উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত মোহর আলী।
গত রোববার বাদ আছর আউয়াল মিয়াকে স্থানীয় গোরস্তানে দাফন করা হয়। আউয়াল মিয়া
ঢাকার যাত্রাবাড়ি সংলগ্ন কুতুবখালি এলাকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাড়া
বাসায় থেকে রাজ যোগালির কাজ করতেন। ঘটনার পর থেকেই স্ত্রী ফাতেমা বেগম
ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মোচাগড়া গ্রামে (সরকারি খাস জায়গায়) মানবেতর জীবনযাপন
করছেন।