কুমিল্লার
বুড়িচং উপজেলা কণ্ঠনগর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে ফারজানা আক্তার (২০)
নামে এক গৃহবধূকে মেরে লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে
মালদ্বীপ প্রবাসী স্বামী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৮ জুলাই
২০২৪) বিকেলে স্ত্রীর গলায় আঘাতের চিহ্ন নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নিয়ে যায় স্বামী ফরহাদ হোসেন। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা
করে ফারজানা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।হাসপাতালে পুলিশ আসার খবর শুনে স্বামী
ফরহাদ হোসেন ও তার মা-বাবা পালিয়ে যায়। জানা গেছে, ৩ বছর আগে পীরযাত্রাপুর
ইউনিয়নের কণ্ঠনগর গ্রামের ইয়াছিন বাবুর্চি ছেলে মালদ্বীপ প্রবাসী ফরহাদ
হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার হরিপুর উত্তরপাড়ার রিক্সা চালক রফিকুল ইসলামের
মেয়ে ফারজানার বিয়ে হয়।বিয়ের পর তাদের ঘরে ফাহিম নামে ১৭ মাসের এক
পুত্রসন্তান রয়েছে। সংসারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফারজানার
শশুড় বাড়িতে পারিবারিক কলহ চলছিল। নিহত ফারজানার মা জুলেখা আক্তার
জানায়,তার মেয়েকে বিয়ে করে নেওয়ার পর থেকেই শশুড়-শাশুড়ী মানসিক ও শারীরিক
ভাবে নির্যাতন করে আসছে । এ নিয়ে সমাজ সালিশিও বসেছিল। কয়েক মাস আগে মেয়ের
স্বামী ফরহাদ হোসেন মালদ্বীপ থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসে। কিছু দিন
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো চললেও ইদানিং মেয়েকে মানসিক ও শারীরিক
নির্যাতন করে আসছে এবং শশুড় বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। মেয়ের স্বামী
কয়েকদিন পর বিদেশে চলে যাবে এমন খবর শুনে জুলেখা আক্তার ঘটনারদিন সকালে
মেয়ের শশুড় বাড়িতে দাওয়াত দিতে গেলে ফরহাদ হোসেন বলেন ‘আপনার মেয়ের সাথে
আমি আর সংসার করতে চাইনা,আপনার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যান, যত টাকা লাগে আমি
দিয়ে দেব’ এই কথা বলার পর জুলেখা আক্তার জবাবে বলেন,আমার মেয়েকে আমি
পাঁচজন ছাড়া নিতে পারব না।এমন কথা বলে মেয়েকে সন্তানা দিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
বিকেলে খবর আসে ফারজানার লাশ হাসপাতালে রেখে স্বামী ফরহাদ হোসেন পালিয়ে
গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ফারজানার লাশ নিয়ে এসে
তার স্বামী ও তার শশুড় বাড়ির লোকজন চিকিৎসককে জানান, তার স্ত্রী আত্মহত্যা
করেছে। পরে চিকিৎসক তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পায়।
ফারজানার মা জুলেখা
আক্তার, বাবা রফিকুল ইসলাম ও মামা জামাল হোসেন বলেন, ফারজানাকে মেরে ফেলা
হয়েছে। মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। যদি সে ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করতো
তাহলে পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ নামাত এবং শশুড় বাড়িতে জানাত। হাসপাতালে
মেয়ের লাশ রেখে পালাত না। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।
অভিযোগের ভিত্তিতে
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,শশুড় বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
এ সময় তাদের পরিবারের কারোর বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় সুশিল
সমাজের লোকজন ও নিহত ফারজানার বাবার বাড়ির লোকজন প্রশাসনের নিকট সঠিক বিচার
চেয়েছেন।
অভিযোগ পেয়ে থানার তদন্ত ওসি সহ এসআই নূরুল ইসলাম ও এসআই
নাছরউল্লাহ হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর বাড়ির কাউকে পায়নি। হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাশ উদ্ধার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের
জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মার্গে পাঠানো হয়েছে।
বুড়িচং
থানার ওসি আবুল হাসানাত খন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধার করে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন
পেলে অভিযোগ পরিপ্রেক্ষিতে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।