বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪
১৪ কার্তিক ১৪৩১
ঢাকায় সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন কুমিল্লার ৯ জন
জহির শান্ত / তানভীর দিপু
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪, ১:৩৯ এএম |

ঢাকায় সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন কুমিল্লার ৯ জন

সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকায় সংঘর্ষে কুমিল্লায় বাড়ি এক শিশুসহ অন্তত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজনের বাড়ি জেলার দেবিদ্বার উপজেলায়, তিনজনের বাড়ি বরুড়া উপজেলায়, একজনের লাকসামে, একজনের বাড়ি চান্দিনা এবং একজনের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়। তাদের মরদেহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কুমিল্লায় গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রামে সংঘর্ষে চান্দিনার একজনের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলন ঘিরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংঘর্ষে সব মিলিয়ে কুমিল্লার অধিবাসী মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ জনে। তবে দেবিদ্বারে দাফন হওয়া একশিশুর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বলে জানা গেছে। তাকে তার নানার বাড়ি দেবিদ্বারে দাফন করা হয়। 
নিহতরা হলেন- দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. কাদির হোসেন সোহাগ (২৫)। বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. সাগর মিয়া (১৯), রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের মো. মানিক মিয়ার ছেলে দশ বছরের শিশু মো. হোসাইন মিয়া (১০), বরুড়া উপজেলার অর্জুনতলা গ্রামের অলিউল্লাহর পুত্র হাফেজ মাসুদুর রহমান, শিলমুড়ি উত্তর ইউনিয়নের গামারুয়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে মোঃ তাজুল ইসলাম, নোয়াপাড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মোঃ আল আমিন, মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের মৃত মোহর আলীর ছেলে আউয়াল মিয়া (৫৭), লাকসামের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সাতঘর ইছাপুরার শহিদ মিয়ার ছেলে মোঃ ইউসুফ(৪০) এবং চান্দিনা উপজেলার এতবারপুর গ্রামের ময়নাল হোসেন ভূইয়া ছেলে ইমাম হাসান তাইম (১৭)। কুমিল্লার দেবিদ্বার, বরুড়া, লাকসাম এবং মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণ তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকায় এই ৯ জনের মৃত্যু ছাড়াও চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সংঘর্ষে কুমিল্লার চান্দিনার বাসিন্দা ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি ফারুক। ১৭ জুলাই তাকে চান্দিনায় দাফন করা হয়। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামে। সে চান্দিনার অধিবাসী হিসেবে শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই নি¤œ আয়ের মানুষ। সংসারের হাল ধরতে তারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তাদের সকলের বাড়িতেই চলছে শোকের মাতম। শোকাতুর স্বজনরা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন।
নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. কাদির হোসেন সোহাগ একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানীতে চাকরি করতেন। থাকতেন ঢাকার গোপীবাগ এলাকার একটি মেসে। গত ২০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেসের বন্ধুদের সঙ্গে নাস্তার জন্য বের হয়। পরে রাত ৮টার দিকে একটি গুলি এসে সোহাগের বুকে লাগে। বন্ধুরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৩টার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ মারা যায়। 
অপর দিকে, ভ্যানে করে সবজি ও কলা বিক্রি করতেন বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. সাগর মিয়া মো.সাগর মিয়া। বাবা মায়ের সাথে থাকতেন মিরপুর এক নম্বরে।  গত ১৯ জুলাই শুক্রবার ভ্যান করে কাঁচামাল নিয়ে মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে যান। সেখানে সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয় সাগর মিয়া। পরে কয়েকজন তাকে মিরপুরের একটি প্রাইভেট কিøনিকে নিয়ে গেলে রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে ছেলের সন্ধানে হানিফ মিয়া জানতে পারেন তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে একটি হাসপাতালে আছেন। হানিফ মিয়া দ্রুত ওই হাসপাতালে গিয়ে  দেখেন তার ছেলে ওই হাসপাতালের একটি মর্গে ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছে। ছেলের মরদেহ দেখে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন হানিফ মিয়া। পরদিন শনিবার সকালে তার মরদেহ দেবিদ্বারে নিয়ে আসে। দুপুরে জানাজা শেষে বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 
অপরদিকে, মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে চিটাগাং রোড এলাকার বিভিন্ন বাসে-বাসে চকলেট, পপর্কন, আচার বিক্রি করতো দশ বছরের শিশু হোসাইন মিয়া। মা বাবার সঙ্গে থাকতো ওই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। গত ২০ জুলাই শনিবার বিকালে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বের হয় হোসাইন। এরপর নিখোঁজ হয় সে । পরে চিটাগাং রোড এলাকায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হোসাইনের বুকের ডান পাশে গুলি লেগে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হোসাইন মারা যায়। পরে কয়েকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যায়। রাত ৯টার দিকে হোসাইনের বাবা মানিক মিয়া জানতে পারেন তার ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরে সেখানে গিয়ে মর্গের ভিতরে লাশের স্তপের ওপরে তার ছেলের মরদেহ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মানিক  মিয়া। এরপর দুই দিন পর রবিবার রাতে মানিক মিয়ার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এরপর লাশ দেবিদ্বার উপজেলা রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামে নিয়ে আসেন। রাত তিনটার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।    
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, মৃত্যুগুলো মর্মান্তিক। তাদের পরিবার সর্ম্পকে খোঁজ খবর রাখছি। প্রয়োজনে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে নিহত হন মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের মৃত মোহর আলীর ছেলে আউয়াল মিয়া (৫৭)। পরে ঢাকা থেকে মরদেহ কুমিল্লার মুরাদনগরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫২) ও ছেলে হাবিবুর রহমান (২৩)।
ফাতেমা বেগম বলেন, ‘গোলাগুলির বিকট শব্দ শুনে বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে যান আউয়াল মিয়া। হঠাৎ সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানায়, আউয়াল মিয়ার তলপেটে ও রানে (উরুতে) ৩টি গুলি লেগেছে। সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রোববার সকালে সে মারা যায়। বাবাহারা ছেলে মেয়েগুলো এতিম হয়ে গেল। ওদের কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।’
জানা গেছে, ভূমিহীন আউয়াল মিয়া ঢাকার যাত্রাবাড়ি সংলগ্ন কুতুবখালি এলাকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে রাজমিস্ত্রির সহযোগি হিসেবে কাজ করতেন। এ দিকে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন নিহত আউয়াল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। পরিবারটি ভূমিহীন জানতে পেরে তিনি সর্বাত্বক সহযোগিতা করার আশ^াস দেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নু-এমং মারমা মং বলেন, তাদের মৃত্যুর পর লাশ বাড়িতে এনে দাফনের পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। এরপর নিহতদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছি। তাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মোঃ ইউসুফ নামে এক ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রেতা ঢাকায় সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লাকসামে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। আমরা তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। জেনেছি, তার স্ত্রী ও এক কন্যা রয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।













সর্বশেষ সংবাদ
মনোহরগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পি.পি. নিযুক্ত হলেন অ্যাড. সুজন
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
টুটুল পালালেন অস্ট্রেলিয়ায়
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা সদরের সাবেক চেয়ারম্যান টুটুল অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ পেলেন ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া
কুমিল্লায় ১৮ দিনে ২৭ অভিযানে ৬৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২